নির্ভুল বার্তা ডেস্ক:
জলবায়ু পরিবর্তন ও তীব্র তাপদাহে সারাদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। পরিবেশ রক্ষায় তথা তাপদাহ থেকে মুক্তি পেতে সরকার এবং পরিবেশবিদরা যখন গাছ লাগানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন, তখন পর্যটন নগরী কুয়াকাটার ৬০ নং লতাচাপলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫টি বড় বড় গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ ওঠেছে কুয়াকাটা পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে। এসব গাছ কাটার ক্ষেত্রে সরকারী কোন বিধি বিধান মানা হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার সড়ক সংস্কারের নামে গত শনিবার ও রবিবার এসব গাছ কর্তন করে স্ব-মিলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্কুলের ছায়া বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত এসব গাছ কেটে ফেলায় সৌন্দর্য হানির পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যের উপর মারাক্তক প্রভাব ফেলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। কর্তন করা এসব গাছের মুল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন স্কুলের অভিভাবক এবং প্রাক্তন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। কেটে ফেলা এসব গাছ নাম মাত্র মুল্যে বিক্রির অভিযোগ রয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
কেটে ফেলা এসব গাছের দ্বায় নিতে রাজি নয় স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং পৌরসভা। গাছ কাটা নিয়ে পৌরসভা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য নিয়ে ধু¤্রজাল সৃস্টি হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে এসব গাছ সড়ক সংস্কার কাজের জন্য কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার কেটেছে। অন্যদিকে পৌর মেয়র বলছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ কেটেছে। গাছের মালিকানা নিয়েও রয়েছে ধু¤্রজাল।
স্কুলের গাছ কাটার বিষয়টি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল ইসলাম অবগত হলে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামকে তলপ করে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, মহিপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তার সমন্নয়ে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।
ওই স্কুলের সাবেক সভাপতি, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অনন্ত মুখার্জী জানান, তিনি স্কুলের সভাপতি থাকাকালীন স্কুলের সবুজ পরিবেশ বজায় ছিল। স্কুলের শিক্ষার্থীরা গাছের ছায়ায় খেলাধুলা করতো। স্কুলের সবুজ ছায়াবিথির জন্য বরিশাল বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্কুল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এখন সেই বিশালাকৃতির ১৫ টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। একেকটি গাছের মুল্য ২০-২৫ হাজার টাকা হবে বলে দাবী তার। অনন্ত মুখার্জী আরো জানান, এসব গাছ প্রধান শিক্ষক নিজেই কর্তন করেছে। এর আগেও ৬-৭টি বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সেসব গাছ কি করা হয়েছে তার কোন হদিস নেই। প্রায় ৫ লাখ টাকা মুল্যের গাছ কেটে নিয়ে গেছে বলে দাবী তার ।
৬০ নং লতাচাপলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক সাবেক সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, তিনি সভাপতি থাকাকালীন ওই গাছ কাটার জন্য বলা হয়েছিল। তখন তিনি গাছ কাটতে রাজি হননি। তিনি বলেন, স্কুলের গাছ স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া কারো কাটার ক্ষমতা নেই। তবে তিনি শুনেছেন সড়ক সংস্কারের জন্য মেয়র গাছ কেটেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কলাপাড়া উপজেলা শাখার সদস্য সচিব সাংবাদিক মেজবাহ্ উদ্দিন মান্নু বলেন, সড়ক সংস্কার কিংবা দেশের স্বার্থে গাছ কাটার প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেশের বিধি বিধান মেনে গাছ কাটতে হবে। এসব গাছ কাটতে কোন প্রকার বিধি বিধান মানা হয়নি। উল্টো স্কুলের প্রধান শিক্ষক দ্বায় এড়াতে এসব গাছ তাদের নয় বলে সাফাই গেয়ে যাচ্ছেন মোটেই কাম্য নয়।
স্কুলের বর্তমান সভাপতি কাউন্সিলর শহিদ দেওয়ান বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এ বিষয় তাকে কেউ জানাননি। সড়ক সংস্কারের জন্য হয়তো পৌর কর্তৃপক্ষ কেটেছে। তিনি এবিষয় জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন বলে জানান।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, ওই গাছ স্কুলের বাউন্ডারী ওয়ালের বাহিরে। স্কুলের গাছ নয়। সড়ক সংস্কারের জন্য পৌর মেয়র এসব গাছ কেটেছে। এখানে আমাদের কোন হাত নেই। এসব গাছ প্রায় ২০ বছর পুর্বে তৎকালীন স্কুল কর্তৃপক্ষ লাগিয়েছে তাহলে এ গাছ স্কুলের নয় কেন? এমন প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, তিনি এই স্কুলে যোগদান করার পর দেখেছেন এসব গাছ বাউন্ডারী ওয়ালের বাহিরে। এর বেশি কিছু তার জানা নেই।
কলাপাড়া উপজেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার অচ্যুতা নন্দ দাস বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেছেন ওই গাছ স্কুলের বাউন্ডারীর বাহিরে। পৌরসভার গাছ স্কুলের গাছ নয়। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, গাছগুলো বেশি মোটা হয়ে গেছে। যার জন্য বাউন্ডারী ওয়াল ফেটে ভেঙ্গে গেছে। এজন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই কেটে ফেলেছে। তিনি বা পৌরসভার কেউ ওই গাছ কাটেনি।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম এবিষয় বলেন, গাছ কাটার কথা শুনে প্রধান শিক্ষককে ডেকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা ও পৌর নির্বাহী কর্মকর্তার সমন্নয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে।