ণিভূল বার্তা ডেক্স ঃ
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর থানার লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের ৯ গনধর্ষনে অভিযুক্ত ও আরো বিভিন্ন ধরনের ১৭টি মামলার আসামী নাসির (৪০) কে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৮ পটুয়াখালী। ২০ জানুয়ারী বিকাল ৫টার দিকে অভিযান চালিয়ে লেম্বুর বনের ভিতর থেকে ক্ষেপ্তার করতে সক্ষম হয় র্যাব। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে ধর্ষক ও জলদস্যু নাসিরকে মহিপুর থানায় হস্তান্তর করেছে র্যাব।
গত ৭ ডিসেম্বর আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টা হতে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পারভিনকে ধর্ষন করে জোংলা শাহালমসহ তার বাহিনী। এ ঘটনায় গত ৮ ডিসেম্বর মহিপুর থানায় ২ জনের নামসহ আরো ২/৩জন অজ্ঞাত রেখে মামলা করা হয়েছে। মামলা নং-০৮/১৫৭।
ধর্ষিতা মোসাঃ পারভীন বেগম বলেন, গত ২২ নভেম্বর জলদস্যু জোংলা শাহালম বাহিনী অপহরণ করে তার স্বামী ও দুই ছেলে এবং ট্রলারে থাকা স্থানীয় আরো দুই জেলেকে। জলদস্যুরা প্রচন্ড মারধরের পর গরু চুরির মামলা করে ৪জনকে মহিপুর থানা পুলিশে দেয় এবং তার এক ছেলেকে জিম্মী করে রাখে। আসল ঘটনা পুলিশকে বলে দিলে হত্যা করা হবে অপহরণকৃত জেলে সোহেল গাজীকে। জলদস্যুদের হাত থেকে বাচঁতে গরু চুরির মিথ্যা মামলা শিকার করেন জেলেরা। ২৩ নভেম্বর মহিপুর থানার গরুচুরি মামলায় সকল জেলেকে আসামী করা হয়। মামলা নং-১২। ৭৯/৪১১ ধারামতে হাজতে প্রেরণ করায়।
অপরদিকে অপহরণকৃত ছেলেকে উদ্ধারের জন্য ২০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করছে দস্যুরা। তিনি অত্যন্ত গরীব বিধায় মহিপুর থানার সহযোগিতায় অপহরণকৃত জেলেকে জংলা শাহালম বাহিনীর হাত থেকে উদ্ধার করে গরু চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাজতে প্রেরণ করে। কিন্তু জলদস্যুদের বিষয় থানা পুলিশের কোন প্রকার ম্যাথাব্যাথা নেই।
একপর্যায় কিছুদিন পর জোংলা শাহালম তাকে মুঠোফোনে গরুচুরি মামলার বাদীর সাথে আপোষ নিস্পত্তি করিয়ে আসামী ছাড়ানোসহ মামলা নিস্পত্তি করিয়া দিবে বলে আস্বাস দেয়। ৪ ডিসেম্বর নাসির নামের জলদস্যুও মুঠোফোনে একওই কথা বলে।
ফলে ৭ ডিসেম্বর কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের দিঘর বালিয়াতলী নিজ বাড়িথেকে মহিপুর থানার ৭নং লতাচাপলী ইউনিয়নের লেম্বুর চর নামক পর্যটক স্পটে শাহালমের ফ্রাইর দোকানে বিকাল ৪টায় পৌছায়। শাহালম মামলার বাদী জলিলের সাথে মিমাংশা করিয়ে দিবে এবং জলিল দোকানে আসতেছে বলে অপেক্ষা করতে হবে। একপর্যায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে জলিলের বাড়িতে যেতে হবে বলে একটি মটর বাইক এনে মটরবাইকের পিছনে বসতে বললে তিনি মটরবাইকে বসেন। পরিকল্পিত ভাবে পথিমধ্যে কয়েকজন লোক মটরবাইক থামিয়েই মারধর শুরু করে এবং টানা হেচরা করে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে গনধর্ষন কালে একজন বলছে তোর ছেলে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে জানাতে না করে ছিলাম তবুও পুলিশ নিয়ে এসেছিলি কোনো একপর্যায় অজ্ঞান হয় তিনি।
ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জ্ঞান ফিরলে জঙ্গলের ছিলাপথে হাটতে হাটতে ঘন্টাখানেক পরে সাগরপার দেখতে পায়। সমুদ্রপারে কিছু সময় বিশ্রামনিতেই ভাড়ায় চালিত মটরবাইক দেখতে পায়। সেখান থেকে মটরবাইকে সকাল ৮টার দিকে বাড়িতে পৌছায়। বিষয়টি তার ভাই আব্বাস মৃধার কাছে জানালে চিকিৎসা ও মেডিকেল করিয়ে ৮ ডিসেম্বর মহিপুর থানায় মামলা করে।
ঘটনার সড়েজমিনে গেলে জানা যায়, জোংলা শাহলম বাহিনীর শুধু এই একটি ধর্ষইন নয়, রয়েছে আরো পর্যটকসহ ৮টি ধর্ষনের ইতিহাস। তালতলী থানার লাউপাড়া গ্রাম থেকে আসা পর্যটকদের জিম্মিকরে ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল রোজ রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে জামাইর সামনে শাশুরী ও স্ত্রীকে ধর্ষন করেও পার পেয়ে যায় ওই বাহিনী। পটুয়াখালীর দুমকী থানা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক দুই বোনকে ২০১৪ সালে ২৪ ডিসেম্বর জোংলা শাহালম বাহিনীর ১১ দস্যু এ ধর্ষন করে। পর্যটকদের গাইড দেয়া এক মটরবাইক চালক বেল্লাল কুয়াকাটা নৌপুলিশ ফাড়ির ইনচার্চ সঞ্জয় মঙ্গলকে জানালে, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে লেম্বর বন থেকে দুই বোনকে উদ্ধার করে। নিজেদের এলাকায় সম্মান হারাতে না চেয়ে মামলায় অনেকেই রাজি না হওয়ায় আসামীরা পার পেয়ে যায়। এ ভাবেই দিনে পর দিন একের পর এক ধর্ষন ও ছিনতাই কাজে লিপ্ত থাকে ওই গ্রুপ। সমুদ্র থেকে বিশাল জলদস্যু র্যাব বাহিনী নির্মুল করতে সক্ষম হলেও জোংলা শাহালম বাহিনীকে কেউ কিছুই করতে পারেনা কারণ কি? এমন প্রশ্ন ছুড়ছে খাজুরা ও লেম্বুর চরের এলাকাবাসী।
বনবিভাগের বিশাল অংশ জুড়ে দখল করে বসত ভিটা র্ণিমান করে চালিয়ে যাচ্ছে একের পর এক জলদস্যুতা, বনদস্যুতা, গনধর্ষনসহ পর্যটক ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। এব্যাপারে বন বিভাগ ওই দস্যুবাহিনীর কাছেও জিম্মি।
এব্যাপারে খাজুরা বিট অফিসে কর্মরত শাহালম জানিয়েছেন, খাজুরা ও লেম্বুর চর এলাকার মানুষগুলো খুবই মারাত্মক প্রকৃতির, দায়া, মায়াহীন। মুষ্টিময় দু-একজন মানুষ ভালো থাকলেও অধিকন্তমানুষ চুরি করে বনের গাছ কেটে বিক্রি করা তাদের নেশাও পেশা। মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে নারীদের সতিত¦ কেড়ে নিতেও ভুল করেনা। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য জোংলা শাহালম, নাসিরউদ্দিন, সোহেল ফকিরসহ ইউপি মেম্বারসহ অপরাধমুলক কর্মান্ডে জড়িত। সত্য কথা বলতে গেলে তাকে মেরেও ফেলতে পারে, একবার শারীরীক নির্যাতন করেছে। বনবিভাগ সংশ্লীষ্ট কর্তৃপক্ষে অবহিত করলে তারা মামলা করার পরামর্শ দেয়। জঙ্গলের মধ্যে অফিস, থাকেন তিনি একা, এর মধ্যে স্থানীয় ওই কুচক্রি মহলের নামে মামলা দিলে পরের দিন এসে প্রানে মারলেও এর কোন বিচার হবেনা।
পারভীন ধর্ষনের তদন্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, মামলা তদন্তাধীন রয়েছে আসামী পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।
মহিপুর থানা অফিসার ইনচার্জ জানিয়েছেন, আসামী হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।