মোঃ হাবিবুল্লাহ খান রাব্বী,
কলাপাড়া উপজেলার ১১ নং ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নে চলছে উপ-নির্বাচন। প্রার্থী ৫ জন, এর মধ্যে স্বতন্ত্র ২ জন। ভোটার সংখ্যা ৮ হাজার ৭শ ১২জন। ২৮ ফেব্রুয়ারী ভোট গস্খহণ। প্রতিনিয়তই সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে। স্বতন্ত্র পার্থীরা প্রচার প্রচারণায় মাঠে যেতেই যেন নতুন কোন সহিংসতার জন্ম নিচ্ছে। শান্তিপূর্ন ভাবে প্রচারণায় এগিয়ে যাচ্ছে বি এন পি মনোনীত প্রার্থী —- ইসলামী শাসনতন্ত্র আব্দুল মালেক মাষ্টার (হাত পাখা) তাদের প্রচার প্রচারণায় নেই কোন সহিংসতা।
এদিকে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচনী প্রচারনায় ইউনিয়নের বরকুতিয়া গ্রামের মৃধা বাজারে গেলে সেখানে বহিরাগত সন্ত্রাসী বাদশাহ গ্রুপ প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল ওয়াদুদ সিকদার (আনারশ প্রতীক)’র বাম হাত ও তার কর্মী রাকিবুল (২৬)’র বাম পা ভেঙ্গে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মহিপুর থানা পুলিশ তাদেরকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কলাপাড়া উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক পটুয়াখালী ২৫০ বিশিষ্ট হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
গুরুতর আহত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুস ছালাম সিকদারের ছোট ভাই (আনারশ প্রতীক) আব্দুল ওয়াদুদ সিকদার জানান, ক্ষমতাসীন দল আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ দেলোর হোসেন নৌকা প্রতীক) তার চাচা হওয়া সত্বেও বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে বাম হাতের উড়– ভেঙ্গে ফেলে এবং কর্মী রাকিবুলের বাম হাটুর বাটি ছুটিয়ে ফেলে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ২৮ ফেব্রয়ারী ভোট গ্রহণ। ভোটাররা সুষ্টু ভাবে ভোট দিতে পারবে কিনা! বা ভোট দিতে নিরাপদে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারবে কিনা! এ নিয়ে চড়ম ভাবে শংকিত তিনি।
আ’লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হওয়া সত্বেও দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন কেন! গণমাধ্যমের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রয়াত চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম সিকদার তার আপন ভাই। তার মৃত্যুতে চড়ম ভাবে তার পরিবারে শোক বইছে। পাঁচ বছর পূর্ন হতে আর মাত্র ১৮ মাস বাকী। সেখানে দলীয় ভাবে তাদের পরিবার থেকে একজনকে দল সিদ্ধান্ত দিলে দিতে পারতো কিন্তু দল তা করেনি। গরীব অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানো তাদের পরিবারের চিরচরিত একটি বিষয়। চেয়ারম্যান হওয়া না হওয়ার মধ্যে কিছুই নেই। কিন্তু বড় ভাই চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় যে সকল উন্নয়ন কর্ম পরিধি হাতে নিয়ে ছিলেন সমাপ্ত করতে পারেননি। ওই সকল উন্নয় কর্মপরিধি সফলতার সাথে সমাপ্ত করে ভাইর মৃত্যু আত্মায় শান্তি ফিড়িয়ে দিতে এবং সাধারণ জনগণের অনুরোধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ব্যাখ্যা দেন তিনি।
অপর দিকে ইউনিয়ন টিতে শুন্য কোঠায় চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী নির্বাচনে একাধী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ২০ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যা ৬টার দিকে আ’লীগ নেতা কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম ওয়ালিউল্লাহ নান্নু সিকদার ঘোড়া প্রতীক)’র সমর্থক কুদ্দুস গাজী (৪০)কে বেধরক মারধর করে গুরুতর আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী বেল্লাল, শাহালম মাষ্টার, আজিজ দফাদার ও তার পুত্র তৈয়ব কুদ্দুসকে উদ্ধার করে স্থানীয় ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কলাপাড়া ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা চলছে আহত কুদ্দুসের। ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের পেয়ারপুর গ্রামের আজিজ দফাদার বাড়ির সামনে এ ঘটনাটি ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী বেল্লাল জানান, কুদ্দুস ও তার বাড়ি পাশাপাশি। প্রতিদিনের ন্যায় সন্ধ্যার সময় এক সঙ্গেই গাববাড়িয়া ষ্টেশনে চায়ের আড্ডা দিতে যাচ্ছিলেন তারা। আজিজ দফাদার বাড়ির সামনে আসতেই একটি মটর বাইকে শিবলু গাজী(৪০) নামের এক আ’লীগ নেতা রাস্তায় না ওাার হুমকী দিয়ে বলে, তোকে রাস্তায় ওঠতে না করে ছিলাম তার পরেও তুই রাস্তায় ওঠছো কেনো এবং অশ্লীল আচারণ করে। এক পর্যায় আরো দুটি মটরবাইক চলে আসে। এতে আনছার দফাদার ও ছবুর এবং অন্য বাইক থেকে কাওছার ফরাজী নেমেই মারধর শুরু করতেই সকলে মারতে শুরু করে কুদ্দুসকে এবং কিল ঘুষি ও লাথি দিতে দিতে বলে এখন আ’লীগের দিন এইয়ার মধ্যে তুই ঘোড়া মার্কা করো সঙ্গে অশ্লীল আচারণতো আছেই।
অপর দিকে ঘোড়া প্রতীকের প্রচার মাইকের তার ছিড়ে ফেলে বাইক চালক আরিফ (২৮)’র মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়। আরিফের একটি বাড়ি ও একটি খামারের কিস্তি ও মাইক ভাড়া ৫ হাজার টাকা পকেট হাতিয়ে নিয়ে যায়। আ’লী সমর্থীত ওই কাওসার গ্রুপের কাওসার ও শিবলু গাজী।
এ ব্যাপারে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম ওয়ালিউল্লাহ নান্নু সিকদার (ঘোড়া প্রতীক) জানিয়েছেন, নির্বাচনের টাকা দাখিলের পর এলাকায় প্রবেশ করতেনা করতেই নানা ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়ে চলছে তারা। গত ১৬ ফেব্রুয়ারী সাড়ে ১১টার দিকে পশ্চিম মনোশাতলী নির্বাচনী প্রচারনায় গেলে সেখানে বরকুতিয়া গ্রামের আ’লীগ নেতা জাহাঙ্গীর মাষ্টার নামের এক অমানুষ দলবদ্ধভাবে এসে অতির্কিত হামলা চালিয়ে ৫জনকে আহত করে। আহতরা হলো ডালবুগঞ্জ গ্রামের আলা উদ্দিন (৩৫), মোশারেফ(২৫), আনছার(৩৫), জহিরুল খান (৩৫), জব্বার(৩০)। তাতেও খ্যান্ত হয়নি ওই জাহাঙ্গীর বাহিনী অবরুদ্ধ রাখে সকলকে। নির্বাচন কমিশনের সহায়তা চাইলে তিনি পুলিশকে ফোন দিতে বলে। পরে পুলিশে ফোন দিলেও কঠোর অবস্থানে থাকে ওই জাহাঙ্গীর ওরপে ত্রাস বাহিনী। একপর্যায় গণমাধ্যম আসলে পালিয়ে যায় ওরা। এছাড়াও গ্রামে গ্রামে ঘোড়া প্রতীকের নারী সমর্থক যারা আছে এবং যারা ক্যাম্পিনে যাচ্ছে, তাদের ইজ্জৎ কেড়ে নেয়ার হুমকী দিচ্ছে আ’লীগের আরেকটি চক্র। প্রতি পদে পদে নির্বাচনী বিধি বা আচারণ ভঙ্গ করে যাচ্ছে। অবরুদ্ধ থাকেন পুলিশ উদ্ধার করে কিন্তু অভিযুক্তদের ব্যাপারে পুলিশ কর্তৃক আটক বা গ্রেপ্তারের কোন ঘটনা দেখা যাচ্ছেনা।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাওসার ও শিবলু জানিয়েছেন, ২০ ফেব্রুয়ারী এ ধরণেষর কোন ঘটনার সাথে তারা সম্পৃক্ত হয়নি। তবে একওই গ্রামে তাদের সকলের বাড়ি-ঘর এবং জমা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকায় কুদ্দুস ও তার সহযোগিরা তাদের ফাঁসাতে চায়।
অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর মাস্টারের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের ভিডিও দৃশ্য সরাসরি সতন্ত্র প্রার্থী নান্নু সিকদারকে মামলা তুলে নেয়ার হুমকী। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীর মাষ্টারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানায় অভিযোগ হয়েছে ক্ষমতা থাকলে পুলিশ ধরবে! তার আচারণে পুলিশকে তারা বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে চলছে।
সহিংসতা সৃষ্টিতে অভিযুক্ত আ’লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ দেলোয়ার হোসেন সিকদার জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার তথা শেখ হাসিনা সরকারের যে উন্নয়ন যা মানুষ শত বছরেও দেখেনি, সেখানে সহিংসতা সৃষ্টি করে ভোট অর্জন করতে হবে কেন? মানুষ এখন বোকা নেই, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সত্যকে ঢেকে রাখা জায়না। সহিংসতা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একটি চক্র, ওই সকল চক্রান্ত সৃস্টি করে নৌকা ঢেকানো জাবেনা ! ইনশাআল্লাহ।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কমিশন আব্দুর রশিদ জনিয়েছেন, সহিংসতার ঘটনা শুনে সংশ্লীষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ হল রুমে সকল প্রার্থী ডেকে হুশীয়ার করে দিয়েছেন। যাতে আর কোন সহিংসতা না ঘটে। যতো টুকু ঘটেছে মহিপুর থানা অফিসার ইনচার্জকে তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে। তিনি নিখুত ভাবে তদন্ত করে ব্যাবস্থা নিবেন।
এ ব্যাপারে মহিপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, তারা আইনানুগভাবে খুবই জোরদার এবং তৎপর। অপরাধী যেই হোক বা যে দলেরই হোক, কেউই ছাড় পাবেনা।