সাক্ষাৎকার : সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, কান্ট্রি ম্যানেজার, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশ
কার্ডে লেনদেনে উৎসাহ বাড়াতে বিশেষ প্রণোদনা দরকার
বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড যাত্রার শুরুর দিকে অংশীদার ছিল লংকাবাংলা ফাইন্যান্স। অন্যদিকে মাস্টারকার্ড কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে ক্রেডিট কার্ড সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল।
দৈনিক নির্ভুল বার্তা ডেস্কঃ
প্রথম আলো: বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসার বর্তমান অবস্থা কেমন? আপনারা কত সাল থেকে এ দেশে কার্ড ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবসা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডে গ্রাহকের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক থাকায় গতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রার চেয়ে কিছুটা কম। এ ছাড়া বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বার্ষিক ব্যয়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, বছরে সেটি ১২ হাজার মার্কিন ডলার। এসব বাধ্যবাধকতাও এই ব্যবসার অগ্রগতিকে কিছুটা মন্থর করে দিয়েছে। মাস্টারকার্ড ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করে। শুরুতে এএনজেড গ্রিন্ডলেজ ব্যাংকের মাধ্যমে কার্ড সেবা চালু করা হয়। বর্তমানে ২০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মাস্টারকার্ড ব্র্যান্ডের কার্ড ইস্যু করছে।বিজ্ঞাপন
কেন একজন গ্রাহক আপনাদের কার্ড ব্যবহার করবেন? অন্যদের তুলনায় আপনাদের কার্ডে বাড়তি কী সুবিধা আছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: মাস্টারকার্ড সরাসরি কোনো কার্ড ইস্যু করে না। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কার্ড ইস্যু করে। মাস্টারকার্ডের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে মাস্টারকার্ড ইস্যুর অনুমোদন দেওয়া হয়। আমাদের কার্ডে দেশে-বিদেশে গ্রাহকদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডেরই রয়েছে সবচেয়ে বড় মার্চেন্ট নেটওয়ার্ক। বর্তমানে এ দেশে আমাদের নেটওয়ার্কে পাঁচ হাজারের বেশি আউটলেট বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যুক্ত রয়েছে। এ কারণে মাস্টারকার্ড গ্রাহকদের কাছে অধিকতর পছন্দের।
করোনার কারণে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসায় কী ধরনের প্রভাব পড়েছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ায় ২০২০ সালের মার্চে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মানুষের স্পর্শহীন বা কন্ট্যাক্টলেস লেনদেনে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আমরাও করোনা মহামারিকালে কন্ট্যাক্টলেস লেনদেনে যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। মহামারির এ সময়ে আগের চেয়ে ই-কমার্স তথা অনলাইনে পণ্য কেনাকাটায় কার্ডের ব্যবহার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। মহামারির আগে যেখানে অনলাইনে কেনা পণ্যের দাম কার্ড বা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিশোধ হতো ১৫ শতাংশ, সেখানে এখন তা বেড়ে ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া আমরা মুদিদোকান, ইলেকট্রনিক পণ্য, অ্যাকোমোডেশন বা থাকার ব্যবস্থা, ওয়ালেট লোডিং ও রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রেও প্রচুর প্রবৃদ্ধি দেখছি।
বর্তমানে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কোন শ্রেণির মানুষের মধ্যে বেশি? নতুন করে দেশে এ ব্যবসা প্রসারের সম্ভাবনা কেমন?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: ক্রেডিট কার্ড এখন আর কোনো বিলাস পণ্য নয়, বরং এটি মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় এক অনুষঙ্গ। বর্তমানে একজন তরুণ নির্বাহীও ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার উপযুক্ত। আমরা দেখেছি, একুশ শতকের নতুন প্রজন্ম, তরুণ এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রচুর আগ্রহ রয়েছে। সে অনুযায়ী বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রেডিট কার্ড ছাড়া হয়েছে। যেমন স্ট্যান্ডার্ড, প্রিমিয়াম ও সুপার প্রিমিয়াম কার্ড।
এ দেশে মাস্টারকার্ড কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে?
সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল: বাংলাদেশে ডিজিটাল কার্ড সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে মাস্টারকার্ডেরই এ দেশে কার্যালয় রয়েছে। মাস্টারকার্ডের জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার। সে জন্য মাস্টারকার্ড এখানে নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য ও দ্রুতগতির সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ডিজিটাল লেনদেনের ইকোসিস্টেম চালু করেছে। বাংলাদেশে মাস্টারকার্ডই প্রথম ইন্টারঅপারেবল কিউআর কোড পেমেন্ট সুবিধা এবং এমএফএস ও কার্ডের মধ্যে অর্থ স্থানান্তরে ‘অ্যাড মানি’ সুবিধা চালু করে। এ ছাড়া বাংলাদেশে একটি দক্ষ পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার, আর্থিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং এমএনওদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে মাস্টারকার্ড।