নির্ভুল বার্তা ডেস্কঃ
ঢাকার মেট্রোরেলের ছয় কোচের আরেক সেট ট্রেন ঢাকায় এসেছে। আজ রাত সোয়া সাতটার দিকে দুটি কোচ নিয়ে প্রথম বার্জ দিয়াবাড়ীর কাছে কোচ নামানোর জন্য প্রস্তুত করা জেটিতে পৌঁছায়। অন্য চারটি কোচবাহী বার্জটি রাত আটটার কিছু আগে জেটির কাছে আসে। তখন সেটি নদীতে নোঙর করে রাখা হয়েছে। কারণ, দুটি বার্জ একসঙ্গে জেটিতে রাখলে ওই পথে অন্য নৌযান চলাচল বিঘ্নিত হতে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামীকাল বুধবার সকাল আটটা থেকে কোচগুলো বার্জ থেকে নামিয়ে উত্তরায় মেট্রোরেলের ডিপোতে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।বিজ্ঞাপন
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ঢাকায় মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ ও ট্রেন চালানোর দায়িত্বে নিয়োজিত। এর মধ্যে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণাধীন মেট্রোরেলের লাইনে (লাইন-৬) এসব ট্রেন চলাচল করবে। ডিএমটিসিএলের তথ্য অনুসারে, দ্বিতীয় মেট্রো ট্রেন সেটবাহী জাহাজ গত ২১ এপ্রিল জাপানের কোবে সমুদ্র বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। ৯ মে বাংলাদেশের মোংলা সমুদ্র বন্দরে পৌঁছায়। মোংলা বন্দরে শুল্ক ও ভ্যাট সম্পর্কিত কার্যাদি সম্পন্ন করে ২৪ মে বার্জে করে নদী পথে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে।
এর মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব শুরু হয়। ২৬ ট্রেন সেট বহনকারী বার্জ ঝালকাঠিতে পৌঁছানোর পর ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এর আশঙ্কায় নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ কারণে ঝালকাঠিতেই নোঙর করে রাখা হয়। ২৮ মে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল মেট্রোরেলের প্রথম একসেট ট্রেন ঢাকায় আসে। ১২ মে বাংলাদেশের প্রথম বিদুৎ চালিত এই ট্রেন উত্তরা ডিপোর ভেতরেই ৫০০ মিটার এলাকায় চালিয়ে দেখা হয়। এর মাধ্যমে বৈদ্যুতিক ট্রেনের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ।
ডিএমটিসিএলের অধীনে ঢাকা ও এর আশপাশে মেট্রোরেলের ছয়টি লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমটি লাইন-৬। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ২০১৭ সালে। দুই পাশে দুটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে ট্রেনের সেটগুলো তৈরি হচ্ছে জাপানে। এরই মধ্যে প্রস্তুত হয়েছে পাঁচ সেট ট্রেন, যার দুটি দেশে এসে পৌঁছেছে।বিজ্ঞাপন
সম্পূর্ণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি) এই ট্রেনে প্রতিটি কোচের ভেতরে দুই সারিতে সবুজ রঙের লম্বা আসন পাতা রয়েছে। মাঝখানের প্রশস্ত খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। দাঁড়ানো যাত্রীদের জন্য ওপরের দিকে হাতল রয়েছে। ট্রেনের উচ্চতা এমন যে স্টেশনে থামার পর এটি একেবারে প্ল্যাটফর্মের সমতলে থাকবে। এতে সহজেই যাত্রীরা হেঁটে ট্রেনে উঠতে পারবে।
মেট্রোরেলের লাইনের দুই পাশে একটু পরপরই বিদ্যুতের খুঁটি থাকবে। দুই খুঁটি থেকে বিদ্যুতের সংযোগ যাবে তারে। আর তারটি ট্রেনের ওপরের অংশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের কাজ করবে। এর মাধ্যমেই চলবে ট্রেনটি। এই ব্যবস্থাটিকে বলা হচ্ছে ‘ওভারহেড ক্যাটিনারি সিস্টেম’। ট্রেনগুলোয় ডিসি ১৫০০ ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা থাকবে। কোচের দুই পাশে চারটি করে দরজা। প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী ধারণক্ষমতা হবে ১ হাজার ৭৩৮ জন। ভাড়া পরিশোধের জন্য থাকবে স্মার্ট কার্ড টিকিটিং ব্যবস্থা।
মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের এপ্রিল পর্যন্ত সার্বিক অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। তবে সরকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ আগামী বছর চালু করতে চায়। এই অংশের কাজ প্রায় ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য অনুসারে, মেট্রোরেল চলার উড়াল রেলপথের (ভায়াডাক্ট) মধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দৃশ্যমান হয়েছে। পুরো পথের ১৬টি স্টেশনের মধ্যে ৫টির কাজ প্রায় শেষ। বাকিগুলোর কাজ চলছে। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়েছে। ডিপো থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বিদ্যুৎ-ব্যবস্থার কাজ হয়েছে। আগামী আগস্ট মাসে ডিপোর বাইরে মেট্রো ট্রেন উড়াল রেলপথে তোলা হবে। সেখানে প্রথমে ট্রেনের পারফরম্যান্স টেস্ট হবে। এরপর সমন্বিত এবং পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষামূলক চলাচল করে আনুষ্ঠানিক যাত্রার উপযোগী করা হবে বলে গত ১২ মে জানিয়েছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আজ রাতে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, দ্বিতীয় সেট ট্রেনও ডিপোতে এনে ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। প্রথম ট্রেন সেট আসার পর যে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল, এর সবই দ্বিতীয় সেটের ক্ষেত্রেও করা হবে।