আব্দুল কাইয়ুম আরজু, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ
সরকার পতন পরবর্তী ৫ ও ৬ই আগষ্ট পটুয়াখালীর কুয়াকাটা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের পাঞ্জুপাড়া গ্রামে একই স্থানে প্রতিপক্ষের করা হামলা, বসতবাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে দ্বায়ীদের মামলা না দিয়ে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী মোঃ রাসেল হাওলাদার লিখিত অভিযোগে জানান, শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর সারাদেশের মতো কুয়াকাটা পৌরসভায় কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোঃ ইয়াসিন গংদের সাথে থাকা জমিজমা সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধীয় জেরে প্রতিপক্ষ গ্রুপটি বহিরাগত একটি দল নিয়ে তাদের বসতবাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও হামলা চালায়। এ বিষয়ে হামলায় নেতৃত্বদানকারীদের মামলার আসামী অন্তর্ভূক্ত না করে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে ভিত্তিহীন একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। মামলার ১ নম্বর আসামীদের সাথে ইয়াসিন গংদের সাথে থাকা সামান্য কিছু জমির সীমানা নির্ধারণে জটিলতা ছিল। গত মে মাসে সেই জমি মামলার বাদী পক্ষ দখলে নেয়। তাদের দখলকৃত জমি গত ৫ই আগষ্ট রাসেল গংরা পুনরায় তাদের সীমানাভূক্ত করার কথা স্বীকার করেন। তবে মামলায় বর্ণিত হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা সত্য হলেও যাদের আসামী করা হয়ছে তা ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা বলে দাবি তাদের।
এ বিষয়ে মামলার বাদী মোঃ ইয়াসিন এর পিতা ও মামলার ৬ নম্বর সাক্ষী মোঃ আনসার আলী জানান, ঘটনার দিন প্রতিবেশী রাসেল গং তাদের জমিতে রোপণকৃত গাছপালা উপড়ে ও কেটে ফেলেছে। তারা আমাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। তবে হাজী চাঁন মিয়া গংদের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক সন্ত্রসীরা দেশীয় দেশীয় অস্ত্র, রড, শাবল নিয়ে আমাদের উপর হামলা ও ভাঙচুর চালায়। এতে তার স্ত্রী সন্ত্রাসীদের ধাড়ালো অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছেন। এবং তার পুত্রবধূসহ আরো বেশ কয়েকজন আহত হন। কিন্তু তিনি মামলায় অন্তর্ভূক্ত করা আসামীদের বিষয়ে দিতে পারেননি কোন সদুত্তর। তিনি বলেন হাজী আঃ মান্নান, হাজী চাঁন মিয়া হাওলাদারদের সাথে থাকা শতাধিক ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের সাথে যে রাসেল গংরা হামলা করতে আসেনি তা আমরা বুঝবো কিভাবে?
মামলার সূত্র থেকে আসামীদের সাথে পাওয়া যায়নি হামলা ও ভাংচূরের কোনো যোগসূত্র। স্থানীয় অটোভ্যান-ইজিবাইক মেকানিক মোহাম্মদ ইলিয়াস, প্রতিবেশী বেলাল সহ বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষ্যদর্শীর সাথে কথা হলে তারা জানান, ঘটনার দিন যাদের নেতৃত্বে হামলা ও ভাংচূর হালানো হয়েছে, তাদের কেউই মামলার আসামি নেই। হাজী চাঁন মিয়া হাওলাদার ও তাদের ভাইদের নেতৃত্বে শতাধিক বহিরাগত ভাড়াটে লোকজন ইয়াসিন গংদের বসতবাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালিয়েছে এবং তাদের উপর হামলা করে চলে যায়। এই হামলায় মামলার বাদী ইয়াসিনের মা জখম হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
সরেজমিন স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যারা হামলা করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা না করে, কেন রাসেল গংদের মামলার প্রধান আসামি করা হলো এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে। তবে গত ৫ই আগষ্ট হামলা ও ভাংচুরের নেতৃত্বে থাকার কথা স্বীকার করে হাজী আঃ মান্নান হাওলাদার ও মামলার ১ নম্বর আসামি রাসেলের সাথে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।
হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় আসামী অন্তর্ভূক্তির বিষয়ে মামলার বাদী মোঃ ইয়াসিন কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। তিনি জানান, মূলত যারা মামলা করেছে তাদেরকে প্রধান আসামি করতে বলা হলেও আমাদের উকিল হামলার প্রধান নেতৃত্বে থাকা দ্বায়ীদের মামলায় আসামি অন্তর্ভূক্ত করেননি। আমি বাড়িতে এসে দেখতে পাই হাজী আঃ মান্নান হাওলাদার গংদের মামলার আসামিই করা হয়নি। তবে আমাদের প্রতিবেশী রাসেল গংরা ঘটনার দিন ৫ই আগষ্ট আমাদের সরকারের বন্দোবস্তকৃত জমি জোরপূর্বক দখল করেছে। তারা নানা ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ আমার পরিবারে নারী সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। তারা রীতিমতো আমাদের প্রাণ নাশের হুমকি সহ এলাকাছাড়া করবে বলে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হামলার প্রকৃত দ্বায়ীদের তদন্ত পূর্বক মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন। তবে আদালত মামলার তদন্ত কার্যক্রম মহিপুর থানায় প্রেরন করলে আশা করছি আমরা এর সুষ্ঠ বিচার পাবো বলে জানান তিনি।