নির্ভুল বার্তা ডেস্ক :
পটুয়াখালীর মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে চলছে তালতামাসা। কুয়াকাটা সহ উপকূলীয় অঞ্চলের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ছিল কলাপাড়া উপজেলার মধ্যে অন্যতম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
জানাযায়, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পুলিন বিহারী অবসরে যাওয়ার পরে সহকারী প্রধান আ: সালাম মাষ্টার মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। আ: সালাম মাষ্টার প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করার পরই শুরু হয় বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম। বিদ্যালয়ের একাধীক অভিভাবকগণের অভিযোগ সালাম মাষ্টার প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকে তার নানা অনিয়ম ও কৌশলের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম মাষ্টার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে নানা অপকর্মে জড়ান তিনি। ফলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতিসহ নষ্ট হয়েছে শিক্ষার মানও। গতবছর এসএসসি পরীক্ষায় ২৩০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহন করে ১৯৪ জন পাস করলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৪টি, প্রতিষ্ঠানে আশানুরূপ রেজাল্ট না হওয়ায় প্রধান শিক্ষককে দায়ী করেন সুশীল সমাজ।
সরেজমিনে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ফেব্রæয়ারীতে। তাই কর্তৃপক্ষ ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলা মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমীক সুপার ভাইজার মনিরুজ্জামানের নির্দেশক্রমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, ফরম বিতরণ, ফরম জমাদান, বাঁছাই প্রক্রিয়া এবং ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ সহ সকল প্রক্রিয়া চলছিল সম্পন্ন করে ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারন করা হয়েছিল ১৪ জানুয়ারি রবিবার। সেমোতাবেক নির্বাচনে অভিভাবক সদস্য পদে ফরম পূরণ করেন ১০জন, তবে একজন ফরম তুলে নিলেও, নির্বাচনী মাঠে ছিল ৯জন। তারিখ অনুযায়ী অনেক অভিভাবকরা ভোট দিতে বিদ্যালয়ে এসে ভোট গ্রহণের পরিবেশ না দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে জানতে পারেন, একজন রাখাইন উপজাতি বিদ্যালয়ের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
অভিযোগটিতে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি প্রকৃত অভিভাবক হয়েও তার নাম নেই ভোটার তালিকায়, ত্রæটি যুক্ত ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন শেষ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। অভিযোগটি আমলে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একাডেমিক সুপারভাইজার ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামানকে বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তা প্রধান শিক্ষকের যোগসাজশে তদন্তে গড়িমসি করে বাদীকে হাজির না করে বিবাদীদের কথা শুনে নিজের মত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে মনিরুজ্জামান বিদ্যালয়টির নির্বাচনের দায়িত্বে থাকলেও নির্বাচন না হওয়ার বিষয়টি অভিভাবক সদস্য প্রার্থী ও সাধারণ অভিভাবকদের কাউকেই কিছু জানায়নী তিনি। তাই ভোট দিতে এসে বিপাকে পড়েন অভিভাবকরা।
ভোট দিতে আসা সাধারণ অভিভাবক রুহুল আমিন দুলাল, নিখিল চন্দ্র সরকার, নারায়ণ শীল, সাগরিকা রানী, নিপা রানী সহ একাধিক অভিভাবক বলেন, ভোট বাতিলের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। এমনকি বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডেও কোনও নোটিশ পাইনি। আমরা ভোট দিতে এসে দেখি ভোট গ্রহনের কোন প্রস্তুতি নাই। আমরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছি।
অভিভাবক সদস্য পদ-প্রার্থী রতন চন্দ্র খরাতী, ইদ্রিস হাওলাদার আক্ষেপ করে বলেন, নির্বাচনের সকল প্রক্রিয়া শেষ করে আমাদের আজ ভোট গ্রহনের দিন ধার্য ছিল, সেইমতে আমরা অভিভাবকদের নিয়ে এসেছি। এসে শুনি ভোট হবে না।
এবিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম মাষ্টার জানান, নির্বাচন হবে কি হবেনা এটা আমার হাতে নয়, এটা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাতে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ জলিল বলেন, প্রধান শিক্ষক নির্বাচনের একটি ভোটার তালিকা খসড়া করে আমাকে দেয়। সেটাতে আমি সাক্ষর করি। খসড়াটি ত্রুটিযুক্ত কিনা সেটা সম্পর্কে আমি অবগত নই, এটা বিদ্যালয়ের সুনাম নস্ট ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার একটি পায়তারা একটি মহলের।
একাডেমিক সুপারভাইজার ও প্রিডাইজিং কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, একজন অভিভাবক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেন, আমি বাদীকে নোটিশ করলেও তিনি আসেনি। আমি তদন্ত প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পাঠালে সেখান থেকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় যথাসময় নির্বাচন করা সম্ভব হয়নী।