কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পর্যটন নগরী কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ অভিযানকে ঘিরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও জেলা প্রশাসনের পাল্টাপাল্টি আল্টিমেটাম। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট সহ সৈকত এলাকার এলোমেলো ভাবে গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদে গতকাল রবিবার মাইকিং করে সরে যাবার জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় জেলা প্রশাসন। আজ সোমবার দুপুরের মধ্যে
অবৈধভাবে গড়ে তোলা দোকানপাট সরিয়ে না নিলে বিকেলে ভেঙ্গে ফেলা হবে এমন আল্টিমেটাম দেয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
এরই প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা একত্রিত হয়ে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে পাল্টা আল্টিমেটাম দিয়ে বিক্ষোভ করে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান তাদেরকে পুনর্বাসন না করে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালালে তা তারা প্রতিহত করা সহ অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকানপাট বন্ধ রেখে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
পাল্টাপাল্টি আল্টিমেটামে পর্যটক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ইতিমধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অনেক দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দাবী আগে পুনর্বাসন পরে উচ্ছেদ।
জানাগেছে, আগামী ১৫ নভেম্বর কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাস্নান ও রাস পুর্নিমার মেলা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এই রাস উৎসব ঘিরে কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট সহ সমুদ্র সৈকত এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অবৈধ ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন।
সমুদ্র সৈকত সহ কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে ওঠা দোকানপাট সরিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনে এমন উদ্যোগ নেয় বলে জানাগেছে জেলা প্রশাসন সুত্রে।
এ উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে গত ১ মাস যাবত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মিছিল মিটিং সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে পৌর বিএনপির সভাপতি আঃ আজিজ মুসুল্লি, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মতিউর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান সোহেল সহ নেতৃবৃন্দ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের যাতে পুনর্বাসন করে এরপর উচ্ছেদ করা হয় এমন অনুরোধ করে জেলা প্রশাসনকে। এরপরও উচ্ছেদের জন্য মাইকিং করে জেলা প্রশাসন।
আজ সোমবার এ বিষয়ে কথা বলতে পৌর বিএনপির নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসনের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বলে জানাগেছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে কি সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি।
ফিস ফ্রাই ব্যবসায়ী কাওসার জানান, প্রতিবছর দুই থেকে তিনবার তাদের উচ্ছেদ করা হয়। কয়েক দফা উচ্ছেদে আমরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমরা গরীব মানুষ। ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালিয়ে আসছি। পুনর্বাসন না করে আমাদের যাতে উচ্ছেদ না করা হয় এমন দাবী জানাচ্ছি জেলা প্রশাসেনর কাছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রুমী শরীফ জানান, কুয়াকাটা সৈকত ও তার আশপাশ মিলিয়ে প্রায় ৫ শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের আয়ের উপর নির্ভর করে কয়েক হাজার মানুষের কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। এদের উচ্ছেদ করা হলে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পরিবার গুলো নিস্ব হয়ে যাবে। বেকার হয়ে যাবে দুই থেকে তিন হাজার মানুষ। রুমী শরীফ আরো জানান, আগে পুনর্বাসন তারপর উচ্ছেদ করা হোক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। পুনর্বাসন না করে উচ্ছেদের চেস্টা করলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তা প্রতিরোধ করবে। প্রয়োজনে দোকানপাট বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করা হবে।
এ বিষয়ে ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অফ কুয়াকাটা (টোয়াক) এর সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, যদি পর্যটনের সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হয় তবে যেন অবশ্যই তাদের পুনর্বাসন করা হয়।
এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মোঃ রবিউল ইসলাম বলেন, বীচ এলাকার সৌন্দর্য বর্ধনে জেলা প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা একান্তই জেলা প্রশানের বিষয়। জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয় এটা আমার জানা নেই।