মোঃ মাহতাব হাওলাদার, মহিপুর।।
বঙ্গোপসাগরে ফের একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রভাবে কুয়াকাটা সংলগ্ন সাগর বক্ষ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। সমুদ্রের উত্তাল রড় বড় ঢেউ তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রেখে ট্রলার নিয়ে আলীপুর মহিপুর শিববাড়িয়া নদীর দুই পারে আড়ৎ ঘাটসহ উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে।
রবিবার সকাল থেকে দিনভর কখনো ভারি আবার কখনো মাঝারি ধরনে বৃষ্টিপাতে জন-জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এছাড়া স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিভিন্ন নদ নদীতে পানি বৃদ্ধিতে নিম্মঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। ভেসে গেছে শতাধিক ঘের ও পুকুর মাছ। অনেক মাছ চাষীদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এদিকে পায়রাসহ দেশের সব সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। একই সাথে সাগরের সকল মাছধরা ট্রলার সমূহকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপকূলজুড়ে বিভিন্ন নদ নদীতে বইছে অস্বাভাবিক জোয়ার। পানি ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত বেড়িবাঁধ থেকে রামনাবাদ নদীর পানি প্রবেশ করে উপজেলার লালুয়া, চম্পাপুর, ধানখালী ইউনিয়নের গ্রামে পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পনিতে তলিয়ে গেছে গ্রামীন জনপদের বাড়িঘর, স্কুল মাদ্রাসা, পুকুর, ঘেরসহ ফসলী ক্ষেত।
এসব এলাকার অধিকাংশ পরিবারের রান্নাও হয়নি। তবে এ বছর আমন আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কৃষকদের। অনেক অসহায় দরিদ্র শ্রেণির মানুষ চরম ঝুঁকিতে ঠাঁই নিয়েছেন বেড়িবাঁধে উপর। তবে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য সংকট। দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে ওইসব বান ভাসি মানুষ। ঘের মালিক জুয়েল সিকদার জানান, তার ঘের সহ অন্ততঃ শতাধিক মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে শতাধিক মাছ চাষী মোটা অংকের লোকসানে পড়বে বলে তিনি জানিয়েছেন।
লালুয়া ইউনিয়নের পশরবুনিয়া গ্রামের মো.ওমর ফারুক জানান, পায়রা বন্দর অধিগ্রহণ করায় পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে নতুন করে বাঁধ নির্মাণ কিংবা পুরনো বেড়িবাঁধ মেরামত করেনি। তাই সেখান দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বাড়ি ঘর ও পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে তার পুকুরের মাছ ভেসে যায়। একই কথা বলেছেন ওই গ্রামের মো.গয়েজ উদ্দিন খান, জসিম খান, জবির মাতুব্বর সহ আরো আনেকে। এসময় কথা হয় ওই গ্রামের গৃহবধু রেহানা বেগমের সাথে। তিনি জানান, দুই দফা জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে তাদের বসতবাড়ি। দুপুরে উনুনে উঠেনি হাড়ি। রাইত হইলে মাইয়া পোলা লইয়া মাচায় থাকতে হবে। এদিকে ট্রলার মলিক মো. ইউসুফ ঘরামি বলেন, বর্তমানে সাগর উত্তাল রয়েছে। তাই তাদের ট্রলার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নোঙ্গর করে রেখেছেন।
ধানখালী ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামে বাসিন্দা মো.নাসির উদ্দিন বলেন, বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে প্রতিদিন দুই দফা জোয়ারের পানি প্রবেশ করে মানুষের ঘড়-বাড়ি, ফসলি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভাটার সময় পানি কমে গেলেও ফের জোয়ারের সময় ডুবে থাকে এসব গ্রাম। গ্রামের কৃষকের চাষাবাদ তো দূরের কথা, মানুষ এখন চরম দুর্ভোগে দিন পার করছে।
লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, রাবনাবাদ পাড়ের দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত রয়েছে। মানুষের বাড়িঘর সম্পদ সব অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। মহিপুর মৎস্য আড়ৎদার সমবায় সমিতির সভাপতি দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম জানান, সাগরে লঘু চাপের প্রভাবে গত তিনদিন ধরে সাগর উত্তাল থাকায় জেলেরা মাছ শিকারে যেতে পারছে না। শতশত জেলেরা ট্রলার নিয়ে উপকুলের বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।