তুষার হালদার, কলাপাড়া সংবাদদাতা :
কলাপাড়া পৌরসভার প্রবাহমান চিংগরিয়া খাল রক্ষায় ৩ ডিসেম্বর আদালত রুল জারি করেছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ‘‘চিংগরিয়া খাল’’ খালের বন্দোবস্ত বাতিলের অগ্রগতি এবং এসএ ৪৪১, ৪৪৩, ৫২৬ এবং ৮৪২ নং দাগে অবস্থিত ভূমির সকল তথ্য বিষয়ক একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদন আদালতে আদেশ প্রাপ্তির ৬ মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন মহামান্য আদালত। এস. এ. ৪৪১, ৪৪৩, ৫২৬ এবং ৮৪২ নং দাগে অবস্থিত ‘‘চিংগরিয়া খাল’’ এর ৫.৪৬ একর ভূমি উদ্ধারের ও এ খালের জায়গা ব্যক্তি বিশেষের নামে দেয়া বন্দোবস্ত বাতিলের ব্যর্থতা সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী বিধায় কেন তা অবৈধ, অসৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত এবং জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে ৫.৪৬ একর খাল ও নদী হিসেবে রেকর্ডীয় ভূমি উদ্ধারের এবং আইন বহির্ভূত ভাবে খাল ও নদী হিসেবে রেকর্ডীয় ভূমির শ্রেণি নাল শ্রেণিতে রূপান্তরিত ভূমি রেকর্ড সংশোধনের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন মহামান্য আদালত। চিংগরিয়া খালের ভূমি রেকর্ড সংশোধন, বেআইনি ভাবে প্রদানকৃত বন্দোবস্ত বাতিল ও ‘‘চিংগরিয়া খাল’’ পুনরুদ্ধার চেয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি জনস্বার্থমূলক (নং১৪৭২৯/২০২৩) মামলার প্রাথমিক শুনানী শেষে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো: আতাবুল্লাহ এর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, খালটি কলাপাড়ার খেপুপাড়া মৌজায় আন্ধারমানিক নদী হতে উৎপন্ন হয়ে কলাপাড়া পৌরসভার ১ থেকে ৭ নং ওয়ার্ডের একটি অংশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে একই মৌজার চাকামইয়া-নিশানবাড়িয়া (দোন) নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। কলাপাড়া ভূমি অফিসের তথ্য মতে খালটির মূল স্রোতধারা খেপুপাড়া মৌজার ৪৪৩, ৫২৬ ও ৮৪২ নং দাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত । এটি কলাপাড়া পৌরসভার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একমাত্র খাল। পৌর শহরের ৫ হাজারের অধিক জনসাধারণ এ খালের উপকারভোগী এবং কৃষিকাজ, পানি নিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারের পানির একমাত্র উৎস।
কলাপাড়া পৌরসভা উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় প্রতি বছর বর্ষাকালে ও জলোচ্ছাসে সমুদ্ররে লোনা পানিতে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি ডুবে যায়। ওই লোনা পানি এখাল দিয়েই দ্রুত নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। খালটি কলাপাড়া উপজেলা ভূমি অফিস শ্রেণী পরিবর্তন করে খাল থেকে নাল শ্রেণীতে পরিবর্তন করে। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক উল্লেখিত খালের অংশ বিশেষ কিছু ব্যক্তির নামে দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়।
বন্দোবস্ত গ্রহীতারা খালের একাধিক অংশে বাধঁ দিয়ে মাছ চাষ করার পাশাপাশি ভরাট করে নির্মাণ করেছে বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ খালটি সংকীর্ণ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন কৃষি নির্ভর জনগোষ্ঠী। জলাবদ্ধতায় ফসল ফলাতে পারছে না শত শত একর জমির কৃষকরা। খালের ভূমি রেকর্ড সংশোধন ও শ্রেনী পরিবর্তন এবং বেআইনিভাবে প্রদান করা বন্দোবস্ত বাতিলসহ খালটি যথাযথ সংরক্ষণে ‘বেলা’ উল্লেখিত মামলা দায়ের করে।
মামলায় বিবাদী করা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার, পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), কলাপাড়া উপজেলা এবং পটুয়াখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পটুয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এবং কলাপাড়া উপজেলা, পটুয়াখালীর সহকারি কমিশনার (ভূমি)। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ডেপুটি এর্টণী জেনারেল তুষার কান্তি রায় এবং বেলা‘র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আশরাফ আলী ও তাঁকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিঙ্কন বায়েন বলেন, দীর্ঘ দিনের কলাপাড়া পৌরবসীর একটি আকাঙ্খা ছিলো যাতে খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ হয়। খালের জায়গাটি নাল দেখিয়ে অবৈধভাবে লিজ দেয়া হয়েছে। বেলা এ ব্যাপারে একটি মামলা করেছে। যাতে করে খালের জায়গায় বা নদীর জায়গা দখল মুক্ত করা হয়। বাংলাদেশে যে পরিবেশ আইন আছে সে আইন অনুসারে পরিবেশ রক্ষা হয়। এ ব্যাপারে একটি রুল জারি করা হয়েছে।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।