মহিপুর প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর মহিপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসা সহকারী সুবীর কুমার পালের বিরুদ্ধে বিসিএস না হয়েও জন্ম তারিখ নির্ধারণী প্রত্যয়ন পত্র সত্যায়িত করাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
জানা যায়, মহিপুরের নজীবপুর গ্রামের রাবেয়া বসরী নামের এক নারীর জন্ম তারিখ নির্ধারণীর প্রত্যয়ন পত্র সত্যায়িত করেন তিনি। যা তার এখতিয়ার ভুক্ত নয়। তাছাড়া এমবিবিএস না হয়েও নামের সাথে ডাক্তার লেখা, হাসপাতালে এমবিবিএস ডাক্তার থাকা সত্বেও আলাদা চেম্বারে রোগী দেখা, রোগীদের কাছ থেকে একশত টাকা ভিজিট নেওয়া এবং অপ্রয়োজনে তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, সামান্য জ্বর হলেই রোগীদের টু-গ্রাম (Ceftriaxone) ইনজেকশন লিখে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সুবীর কুমারের বিরুদ্ধে।
এছাড়া ওষুধ কোম্পানী থেকে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করে মানহীন ওষুধ প্রেসক্রাইব করা, ক্লিনিক থেকে মোটা অংকের কমিশন গ্রহণ করে রোগীদের তাদের চেম্বারে পাঠানো এবং যারা তাকে চাহিদা অনুযায়ী কমিশন না দেয় তাদের ক্লিনিকে রোগী না পাঠানো, হাসপাতালের পুকুর লিজ দিয়ে অর্ধলক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। তাছাড়া চিকিৎসা সহকারী হয়ে অঢেল সম্পদ অর্জনেরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
কেউ কেউ বলছেন, তার নিজ এলাকা টাঙ্গাইলে রয়েছে তার ৮০ লক্ষ টাকা মূল্যের ফ্লাট, বরিশালে রয়েছে প্লট। মহিপুরে ভাড়া থাকেন মাসে ১০ হাজার টাকার ফ্লাটে, চড়েন দামি বাইকে। হাসপাতালের সরকারি যে কক্ষে পরিবার নিয়ে তিনি থাকতেন সেখানে টাইলস লাগিয়ে অবকাঠামো পরিবর্তনেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অনেকে বলছেন, দীর্ঘ ৭ বছর উপরস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তিনি এক জায়গায় এতো বছর রয়েছেন এবং এক তরফা আধিপত্য বিস্তার করেছেন।
মহিপুরের নজীবপুর গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল ঘরামী জানান, দুই বছরের জন্য সুবীর বাবুর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকায় হাসপাতালের পুকুর লিজ নেন তিনি এবং তার সহযোগী ইকবাল। তাছাড়া তাদের সাথে ব্যবসায়ও ভাগিদার হিসেবে রয়েছেন সুবীর কুমার।
মহিপুরের আব্দুল হাই প্যাদা জানান, হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভিতরে চাম্বল গাছ বিক্রি করেছেন সুবীর কুমার পাল।
নিজামপুর গ্রামের ফরিদ ফকির জানান, সামান্য রোগের সমস্যা নিয়ে গেলেও তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা দেন, যা করানোর সক্ষমতা থাকেনা তাদের।
মহিপুর নূরানী হাফেজী মাদরাসার প্রধান শিক্ষক আনোয়ার জাহিদ জানান, হাসপাতালে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগী নিয়ে গেলে তাকে একশত টাকা করে ভিজিট দেওয়া লাগে। আর তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে প্রতারিত করছেন।
মহিপুর গ্রামের আলম ফকীর জানান, তার ভাবি সামান্য বুকে ব্যাথা নিয়ে তার কাছে গেলে তিনি অতিরিক্ত পাওয়ারফুল এন্টিবায়োটিক দেওয়ার ফলে তার অবস্থার অবনতি হয়। পরে পটুয়াখালী নিয়ে গেলে সে সুস্থ হয়।
মহিপুর বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন দুলাল ধ্রুববাণীকে বলেন, সুবীর কুমার পালের অনিয়ম জেনেও জেলা সিভিল সার্জন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাকে বহাল তবিয়তে থাকতে সহযোগিতা করছে। ফলে সে এই এলাকার অসহায় মানুষদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়ে ল্যাব থেকে মোটা কংকের কমিশন গ্রহণ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। তাছাড়া এসব অভিযোগ ধামাচাপা দিতে এবং উপরস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন সুবীর কুমার।
অভিযুক্ত সুবীর কুমার পাল বলেন, আমি ভুল বশতঃ জন্ম তারিখ নির্ধারণী ফরমে স্বাক্ষর করেছি, যা আমার এখতিয়ারে নেই। তাছাড়া অন্য সকল অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন এবং সাংবাদিকদের এ বিষয়ে নিউজ না করার অনুরোধ করেন।
কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় বলেন, জন্ম তারিখ নির্ধারণীতে সত্যায়িত করার তার কোনো এখতিয়ার নেই। এ বিষয়ে তাকে শোকজ করা হয়েছে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডাঃ এস এম কবির হাসান ধ্রুববাণীকে বলেন, অফিসিয়ালভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে পুকুর লিজ দেওয়ার ব্যাপারে তারা অবগত নন। তাছাড়া এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।