কুয়াকাটা প্রতিনিধি:
জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে মসজিদ সংলগ্ন মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে কলাপাড়ার ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে পটুয়াখালী ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে স্থানীয় মুসুল্লি ও মসজিদ কমিটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসমিন সাদেককে শোকজ নোটিশ করা হয়। আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে কারন দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে।
জানাগেছে, কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে অবস্থিত সাগর সৈকত জামে মসজিদ সংলগ্ন মহাসড়কের পাশে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ব্যাতিরেকে মার্কেট নির্মাণ করছেন উপজেলা প্রশাসন।
মসজিদের মুসুল্লীদের দাবি যে জমিতে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে ওই জমি মসজিদ কতৃপক্ষের।
অপরদিকে ওশান গ্রুপ, স্থানীয় জাহাঙ্গীর হাওলাদার ও রহিম খান গংরা দাবী করছেন, বিরোধপূর্ণ ঔ জমি ক্রয় সূত্রে তারা মালিক। তারা আরো দাবি করেন, ২৮৯৭/২০১০ মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ৪ একর ৭৭ শতাংশ জমির মালিক সাব্যস্ত হয় মালেক ফরাজি গংরা। উক্ত মালেক ফরাজী সুপ্রিম কোর্টে ডিগ্রি প্রাপ্ত হইয়া ১২/৮/২০১৫ ইং তারিখ কুয়াকাটা সাগর সৈকত জামে মসজিদ এর অনুকূলে ১০ শতাংশ ভূমি সাব কবলামূলে বিক্রয় করেন। অত্র মসজিদ কমিটি সাব-কবলা দলিলমূলে মালিক থাকিয়া উক্ত জমি ভোগ দখলে আছে। অন্যদিকে ওশান গ্রুপ কতৃপক্ষ দাবি করেন, মালেক ফরাজি গংদের কাছ থেকে ৪ একর ৭৫ শতাংশের জমির মালিক তারা। যার বিএস রেকর্ড সরকারের নামে থাকায় তারা আদালতে রেকর্ড সংশোধনী মামলা করেছেন।
মসজিদ কমিটির দাবী অত্র জমি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম এর নেতৃত্বে জোরপূর্বক দখল করে তার খেয়াল খুশিমতো প্রকল্প দিয়ে একটি মার্কেট নির্মাণ করছে। এতে কোটি টাকার বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে পরেছে উপজেলা প্রশাসন এবং উপজেলা ভূমি প্রশাসন এমন দাবি তাদের।
এ বিষয়ে মসজিদ কতৃপক্ষ একাধিকবার বাধা দিলেও উপজেলা প্রশাসন তা শুনছেন না। এরই প্রেক্ষিতে পটুয়াখালী ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মসজিদ কমিটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নম্বর ৫৫৭/২৫। যাতে আসামী করা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসমিন সাদেককে।
উক্ত মামলায় গত ১৪ই মে, ২০২৫ ইং পটুয়াখালী যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতের বিচারক কলাপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং উপজেলা প্রশাসনকে উক্ত ভূমির উপর কেন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না মর্মে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এবিষয়ে মসজিদের মুসুল্লি মোঃ জাহাঙ্গীর হাওলাদার বলেন, ইউএনও এবং এসিল্যান্ড মসজিদ কমিটিকে তোয়াক্কা না করে মসজিদের জমিতে অবৈধভাবে জোরপূর্বক মার্কেট নির্মাণ করছেন। যার কারণে মসজিদ কমিটি মামলা করতে বাধ্য হয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসন বেরীবাঁধের বাহিরে স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। অথচ উপজেলা প্রশাসন নিজেরাই সেই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে মসজিদ এবং পাবলিকের জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করছেন। এব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার এর মুঠো ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব মোঃ রবিউল ইসলামের নামে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্র বলছেন, সাবেক এমপি মহিবুর রহমানের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় দায়িত্বপ্রাপ্ত হন ইউএনও রবিউল ইসলাম। আওয়ামী লীগ ও অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলেছে উপজেলার সাধারণ মানুষ।
সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী- পটুয়াখালী ০৪ আসনে মহিবুর রহমান মুহিব বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি হওয়ার পর পরই গড়ে তুলেন ইউএনও’র সাম্রাজ্য। এমপি মহিবের সুযোগ্য ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই ইউএনও উপজেলার প্রতিটি খাতের নিয়ন্ত্রণ নেন। তার কৌশলের কাছে অসহায় সমুদ্র উপকূলের মানুষ।
এবিষয়ে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: রবিউল ইসলাম বলেন, তারা সরকারি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করছেন। মামলা ও এসিল্যান্ডকে শোকজের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন কাগজ পাইনি। আর প্রতিদিন যে পরিমান কাজ থাকে তাতে এতো কিছু মনে রাখার সুযোগ কই বলে জানান তিনি।