কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) সংবাদাদাতা :
সারা দেশের ন্যায় কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকায় আওয়ামী সরকারের আমলে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের মাথা গোজার জন্য মুজিব শর্তবর্ষের উপহার হিসেবে আশ্রায়ণপ্রকল্পের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে ঘর। অথচ কুয়াকাটা এলাকার এসব ঘরে ঠাই হয়নী প্রকৃত ভূমিহীনদের। যারা ঘর পেয়েছেন তারা অনেকেই থাকছেনা এসব ঘরে, এমন অভিযোগ অনেকের।
অভিযোগে জানাযায়, কতিপয় অসাধু লোক নিজেদের আখের গোছাতে মরিয়া হয়ে আইনের তোয়াক্কা না করে উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সংশ্লিষ্ট প্রকৃত গৃহহীন ও ভূমিহীনদেরকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে তাদেরকে বঞ্চিত করে করেছেন আত্মীয় করন ও দলীয় করন।
সরেজমিনে দেখাগেছে, কুয়াকাটার নয়াপাড়া আবাসন প্রকল্পের ৬৪ টি ঘরের মধ্যে আটটি ঘর শুরু থেকে তালাবদ্ধ ছিল।

Oplus_131072
পরবর্তীতে স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেঘরের তালা খুলে অন্য লোক উঠানো হয়েছে। সেখানেও উপজেলা প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে লোক উঠানোর অভিযোগ রয়েছে। নয়াপাড়া আবাসনে বর্তমানে ৬৪ নম্বর ঘরে সালমা দম্পতি থাকেন, সে এ এলাকার বাসিন্দা নয়। তার বাবার বাড়ি পাথরঘাটা এবং স্বামীর বাড়ি ঢাকায়। বাবা এবং স্বামীর ঠিকানার কোথাও তার জাতীয় পরিচয় পত্র হয়নী। তাহলে কিভাবে নাম ঠিকানা বিহীন অপরিচিত লোক আশ্রায়ণপ্রকল্পের ঘর পেলো এ প্রশ্ন জনমনে। এমনকি সালমার স্বামী মাদক মামলার সাজা প্রাপ্ত আসামী হওয়ায় সে বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। নাম ঠিকানা বিহীন অপরিচিত লোক থাকার সুযোগ করে দেয়ায় কিছুদিন পর তার আসল পরিচয় পাওয়াগেল সে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। বর্তমানে ওই ঘরটি খালি রয়েছে। এছাড়া ৫৩ নম্বর ঘরের প্রকৃত মালিক কচ্ছপখালী গ্রামের মকবুল ফকিরের ছেলে শহিদ ফকির। সে তার নামের বরাদ্ধকৃত ঘরটি কুষ্টিয়ার জীবন নামের এক লোকের কাছে বিক্রি দিয়ে তিনি থাকেন তার নিজ বাড়ি কচ্ছপখালী। ৫২ নম্বর ঘরটির প্রকৃত মালিক আলাউদ্দিন তিনি ঘরটি বিক্রি দিয়েছেন ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকায় জহিরুল নামের একজনের কাছে। ৪১ নম্বর ঘরের প্রকৃত মালিক নুর হোসেন তার ঘরটি বিক্রি দিয়েছেন সুমন নামের একজনের কাছে। অথচ সুমন সেও ওই ঘরে থাকেনা থাকেন তার বোন মুক্তা ও মুক্তার পরিবার। ৪০ নম্বর ঘরের প্রকৃত মালিক নয়াপাড়া গ্রামের অতুল চন্দ্র বিশ^াসের ছেলে দুলাল বিশ^াস। দুলাল বিশ^াস দিনের বেলায় মাঠে কাজ কর্ম করেন এবং তার স্ত্রী বাবা মার দেখাশুনা করেন। রাতে তাদের নামের বরাদ্ধকৃত ঘরে রাতযাপন করেন। কিন্তু দুলালের সে ঘরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল ইসলাম দুলালের অবর্তমানে তালা ভেঙ্গে মালামাল বাহিরে ফেলে কুয়াকাটার রেজাউল নামের একজনকে উঠিয়ে দেন।

Oplus_131072
দুলাল বলেন, দীর্ঘ বছর আমার বাবা নয়াপাড়া এলাকায় বাড়ি-ঘর তৈরী করে বসবাস করে আসছেন। তখন এ এলাকায় তেমন কোন বসতি ছিলনা। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে বাবার সাথে যৌথ পরিবারেই বসবাস করে আসছি। বড়ই পরিতাপের বিষয় আমার দু’টি সন্তান মৃত্যু বরণ করায় আমাদের বাড়ির সামনে তাদের রাখা হয়েছে। তখন এখানে কোন ঘর বাড়ি ছিল না। যখন আশ্রায়ণপ্রকল্প’র ঘর তৈরী করা হয় তখন জমির পরিমাপ করে দেখা যায় আমার সন্তানের কবর সরকারের খাস খতিয়ানের মধ্যে পড়েছে। এটা জানার পরেও সেখানে আশ্রায়ণপ্রকল্পের ঘর উঠানো হয়েছে। আমি বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর স্যারকে অবহিত করায় স্যার আমার সন্তানদের কারণে ৪০ নম্বরের ওই ঘরটি আমার নামে বরাদ্ধ দেন। অতিব দুঃখের বিষয় বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল ইসলাম স্যার আমার অনুপস্থিতিতে ঘরের সকল মালামাল বাহিরে ফেলে অন্য লোক উঠিয়ে দেন।
অপরদিকে পটুয়াখালীর মহিপুর সদর ইউনিয়নের ইউসুফপুর মুজিব কেল্লা সংলগ্ন আশ্রায়ণপ্রকল্পে যে ঘরগুলো রয়েছে তার মধ্যে ৩৩ নম্বর ঘরটি এখনও তালাবদ্ধ রয়েছে। যার নামে ঘর রয়েছেন তিনি থাকেন অন্যত্র। তার নিজস্ব বাড়ি ঘর রয়েছে বলে জানাযায়, যেকারণে তিনি এখানে থাকেনা।
৪৩ নম্বর ঘরের মালিক আল আমিন, তিনিও এখানে থাকেনা, থাকেন খালাত ভাই পরিচয়ের সুমন নামের এক ব্যক্তি। ৩৫ নম্বর ঘরের প্রকৃত মালিক পপি, তিনি তার বরাদ্ধের ঘরটি বিক্রি দিয়েছেন হনুফা নামের একজনের কাছে।
এছাড়া মহিপুর মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন ২৭ নম্বর ঘরের মালিক আলমগীর, তিনি এখানে না থেকে সে ঘরটি এক অটো গাড়ির চালকের কাছে ভাড়া দিয়েছেন, যদিও অটোচালক ভাড়ার কথা অস্বিকার করে বলেন, তিনি এমনিতেই থাকেন। প্রশ্ন হলো যার নামে ঘর তার যদি ঘরের প্রয়োজন হত তাহলে সেখানে অন্য লোক থাকবে কেন।
জানাযায়, যাদের নামে আশ্রায়ণপ্রকল্পের ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে তাদের অনেকেরই এসব ঘরের প্রয়োজন নেই, তারা ওই সকল ঘর গোপনে গোপনে নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছেন।
এবিষয় মহিপুর আশ্রায়ণ প্রকল্প-২, সমবায় সমিতি লি: এর সভাপতি মো: সোহরাফ হোসেন বলেন, এখানে কয়েকটি ঘরে শুরু থেকেই লোক থাকে না এবং কিছু ঘরে মালিকের পরিবর্তে তার স্বজন থাকেন, এখন তারা প্রকৃক ভূমিহীন কিনা আমি জানি না।
এব্যাপারে মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: ফজলু গাজী বলেন, ঘরের এমন বিষয় আমার কাছে কোন খোজ খবর নাই, তবে আমি বিষয়টি তদন্ত করে জেনে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিব।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: রবিউল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে আমরা জেনেছি, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।