নির্ভুল বার্তা ডেস্ক :
পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় বন বিভাগ কর্তৃক পক্ষের নিয়োগকৃত ভিলেজারদের উচ্ছেদ করতে কতিপয় অসাধু বন কর্মকর্তা মরিয়া হয়ে উঠেছে। মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা টাকার লোভে অন্ধ হয়ে বে-আইনীভাবে দীর্ঘ ৬৩ বছর ধরে বসবাসকৃত বনপ্রজাদের উচ্ছেদের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, ওই কর্মকর্তা কুয়াকাটা বিটে নিয়োগকৃত ভিলেজারদের প্রতি পরিবার থেকে মোটা অংকের উৎকোচ দাবী করে আসছেন। তার দাবীকৃত টাকা না পেয়ে ভিলেজারদের শেষ সম্বল মাথা গোজা ঠাইটুকু কেড়ে নিতে উচ্ছেদের নামে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
বন বিভাগ সুত্রে জানাযায়, পটুয়াখালী জেলাধীন কলাপাড়া উপজেলার জে,এল ৩৪ নম্বর লতাচাপলী মৌজার এস,এ ৭৬২৬ ও আর,এস ৬৬০২ নম্বর খতিয়ানের ১৮১৮.৯৩ একর ভূমি ১৯৬০ সালের ১২ জুলাই সরকার ঘোষিত গেজেট মূলে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে পটুয়াখালী বনবিভাগের মহিপুর রেঞ্জাধীন কুয়াকাটা এলাকার বনাঞ্চল সম্প্রসারণে কুয়াকাটা বিট নামে অন্তর্ভুক্ত হয়। তৎকালীন সময়ে বর্ণিত বনভূমি রক্ষণা বেক্ষণ, প্রয়োজনীয় সার্বক্ষনিক মজুর সরবরাহের নিমিত্তে ‘দি বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ফরেস্ট ম্যানুয়াল পার্ট টু, পৃষ্ঠা নম্বর ১৩, অনুচ্ছেদ ২৮ ও ২৮ (১) অনুযায়ী ইষ্ট পাকিস্তান ফরম নম্বর ১৬৮৫ এবং বন বিভাগের নন্ স্ট্যান্ডার্ড ফরম নম্বর ২৯ মোতাবেক কক্সবাজার জেলার সোনাদিয়া সমুদ্র ভাঙ্গন এলাকার ৩১টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের আওতায় আনা হয়। সে লক্ষ্যে কুয়াকাটা বিটে তাদের প্রতি পরিবারে ৩.০০ একর করে মোট ৯৩.০০ একর, বনভূমি বসতি চাষাবাদের জন্য বরাদ্ধ দিয়ে তাদেরকে ভিলেজার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে বসবাসের অনুমতি দেন।
বসবাসের শুরু থেকেই তারা বন বিভাগের নির্দেশে তাদের নিয়ম অনুযায়ী ঢালচর, কাউয়ারচর, চরমোন্তাজ, সোনারচর, লেবুরবন, ফাতরারবন ও ছকিনা সহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় সৃজিত বাগানে বিনা বেতনে নানা রকমের কাজ কর্ম করে আসছে। এ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজ পত্র ভিলেজার হেডম্যান মৃত মো: মতিউর রহমান এর নিকট সংরক্ষিত ছিল। প্রকৃতির নির্মম পরিহাস ১৯৬৫ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণীঝড় ও জলোচ্ছাসে তাদের কাগজ পত্র সম্পূর্ন বিনষ্ট হয়ে যায়। এ সুযোগে কতিপয় অসাধু বন কর্মকর্তা ভিলেজারদের পূনরায় তাদের পরিচয় পত্র প্রদান করার শর্তে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করেছেন যার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
এ বিষয় বনপ্রজা আ: কাদের জানান, তাদের সমস্যার কথা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর দরখাস্ত দিয়ে জানান হয়েছে, বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত এ ভিলেজারদের সনদ পত্র প্রদান করা হয়নী, কিন্তু বনবিভাগ অজ্ঞাত কারণে নিরব রয়েছেন। তাই ভিলেজাররা নিজেদের শেষ সম্বলটুকু টিকিয়ে রাখতে ইউনিয়ন পরিষদের রেজুলিউশন সহ স্থানীয় সাংসদ এর সুপারিশ সহ বন বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর আবেদন করেও কোন ফল পায়নী।
তিনি আরও জানান, সম্প্রতি মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা তার দাবীকৃত টাকা না পেয়ে ভিলেজারদের বসবাসকৃত চাষাবাদের জমিতে বনাঞ্চল/বাগান তৈরী করার কার্যক্রম শুরু করেন। ইতোমধ্যে ওই ৩১টি পরিবারের ১৬ জন মৃত্যু বরণ করেছেন, বর্তমানে তাদের বংশানুক্রমে ৩১ টি পরিবার থেকে ৭২টি পরিবারের সাত শতাধীক লোক বরাদ্ধকৃত বন ভূমিতে ৬৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছে। অথচ তারা অবৈধভাবে জবর দখল করে আছে এমন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বন প্রজাদের উচ্ছেদের পায়তারা করছে মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা।
মানবাধীকার কর্মী শফিকুল আলম বলেন, মানবিক দৃষ্টি কোন থেকে উচ্ছেদের বিষয়টি অমানবিক। ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৬ ধারার ১৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ৬৩ বছর যাবৎ বসবাসরত বন বিভাগ কর্তৃক নিয়োগকৃত ভিলেজারদের অনুকূলে প্রদত্ত ৯৩.০০ একর বনভূমিতে তাদের স্বত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তাই অযৌক্তিকভাবে তাদের পুনর্বাসন ব্যতিরেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম আইনের পরিপন্থি, সেক্ষেত্রে উচ্ছেদ করতে হলে আগে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে।
মহিপুর রেঞ্জ এর আওতাধীন চারটি বিট রয়েছে, যথাক্রমে মহিপুর সদর, খাজুরা, কুয়াকাটা ও ধুলাসার বিট। এসকল বিটের মধ্যে ধুলাসার বিট, নামে আছে, কাজে নাই, ওই বিটের অফিস বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে। ভাঙ্গা অফিস হওয়ায় সেখানে বন কর্মকর্তা না থেকে থাকেন বাবলাতলা বাজারের একটি ভাড়াটিয়া বাসায়। যেকারণে বন দস্যুরা সুযোগ বুঝে বন উজাড় সহ বিভিন্ন অপতৎপরতায় লিপ্ত হচ্ছে।
বিশেষ করে মহিপুরের মত একটি গুরুত্বপূর্ন জায়গায় একজন সাধারণ ফরেস্টারকে রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তার অধিনস্ত আরেকজন ডিপ্লোমাধারী পরেস্টারকে নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনিক জটিলতা সৃস্টি করে রেখেছেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বন বিভাগ কর্তৃপক্ষের এমন দায়িত্বহীনতার কারণেই অনেক প্রভাবশালীরা নিজেদের আখের গোছাতে ওই সকল বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগসাজসে কুয়াকাটায় বেড়িবাঁধ সংস্কারে নামে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়ম চালিয়ে আসছে। বেড়িবাঁধ লাগোয়া বনবিভাগের সৃজিত বণাঞ্চলের বন উজাড় করে নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন দ্বারা বালু উত্তোলন করে মাটির পরিবর্তে দিচ্ছে বালু। সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) এর মাধ্যমে বিশ^ ব্যাংকের অর্থায়নে কুয়াকাটার লতাচাপলী ইউনিয়নের ৪৮ নম্বর পোল্ডারের আওতাধীন ১৫৮ কোটি টাকা বরাদ্ধের মাধ্যমে ৩৮ কি:মি: বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে চায়না ঈওঈঙ কোম্পানি চলমান কাজ দ্রæত উঠাতে স্থানীয়ভাবে ঠিকাদার নিযুক্ত করে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ চালিয়ে আসছেন। তার মধ্যে কুয়াকাটার পূর্ব দিকে মম্বিপাড়া ফরেস্ট রিজার্ভ এলাকায় কাজ করছেন ‘খান কনস্ট্রাকশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং‘ এর স্বত্ত¡াধীকারী মো: আইয়ুব আলী খান। তার চেইনেজ হচ্ছে-২৪+৮০০ থেকে ২৫ কি:মি: এবং ২৫+৫০০ থেকে ২৬ কি:মি: পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখাযায়, ‘খান কনস্ট্রাকশন এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং‘ সহ এরকম কিছু প্রতিষ্ঠান বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে সরকারী নিয়ম নীতি উপক্ষো করে গঙ্গামতি ফরেস্ট রিজার্ভের মধ্যে বন বিভাগের সংরক্ষিত বণাঞ্চল উজাড় করে গভীর রাতে নিষিদ্ধ ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে বড় বড় দিঘি বা কূপ খনন করে লক্ষ লক্ষ সিএফটি বালু উত্তোলন করে বেড়িবাঁধ সংস্কার করে ভয়াবহ পরিবেশ সৃস্টি করছে। এতে সরকারের বন উজাড়ের পাশাপাশি পরিবেশ আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে। এদিকে বেড়িবাঁধ সংস্কারে মাটি দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে বালু। অপরদিকে বেড়িবাঁধ লাগোয় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্যেও বন বিভাগের সংরক্ষিত বণাঞ্চল উজাড় করা হচ্ছে। এভাবে যদি মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হয় তাহলে এ বেড়িবাঁধ বেশী সময় স্থায়ী হবে না বলে স্থানীয়দের ধারণা।
স্থানীয়রা বেড়িবাঁধ সংস্কারের নামে দুর্নীতি ও অনিয়ম নিরসনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
এবিষয় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, কুয়াকাটা বিটের আওতাধীন ভিলেজারদের উচ্ছেদ করতে হলে আগে তাদের পুনর্বাস করতে হবে এবং বালু উত্তোলনের বিষয় বন বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের তদারকি আরও জোরদার করতে হবে।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: সফিকুল ইসলাম বলেন, আইনের মধ্যে থেকে যা করার করা হবে।
এব্যাপারে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো), পটুয়াখালী‘র নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন অলিদ বলেন, আমরা কাজ দিয়েছি চায়না কোম্পানীকে তারা কাদের দিয়ে কাজ করাবে সেটা আমাদের জানার বিষয় নয়, তবে যারা বন বিভাগের মধ্য থেকে বালু উত্তোলন করেছেন, বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিলে, সেখানে আমাদের কোন সহযোগিতা লাগলে দেয়া হবে।