দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর দুমকিতে বিতর্কিত কলেজ অধ্যক্ষের পক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ চেষ্টায় বাধ্য করার অভিযোগ ওঠেছে। অপর দিকে জনতার বাঁধায় শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষার্থীদের আহুত বিক্ষোভ মানববন্ধন চেষ্টা ভন্ডুল হয়ে গেছে। বিক্ষুব্ধ জনতার বাঁধার মুখে তড়িঘড়ি শিক্ষার্থীদের ক্লাশে পাঠালে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় পটুয়াখালীর মুরাদিয়ার বোর্ড অফিস বাজারে আজিজ আহম্মেদ ডিগ্রী কলেজ ক্যাম্পাসে এ ঘটনাটি ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করেছে। সীমাহীন অনিয়ম-দূর্ণীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও নারী কেলেঙ্কারীর অভিযোগে বিতর্কিত অধ্যক্ষ আহসানুল হক (কবির)’র বিরুদ্ধে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে খবর ছাপা হলে এর প্রতিবাদে কলেজটির সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্লাশ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ মানববন্ধনে বাধ্য করা হয়। আজিজ আহম্মেদ কলেজের এইচএসসি ২য়বর্ষের শিক্ষার্থী মো. বেলাল হোসেন জানায়, প্রিন্সিপাল স্যার প্রত্যেক ক্লাশে ক্লাশে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মানববন্ধনে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়াও কয়েকজন শিক্ষক তাদের ক্লাশ থেকে রাস্তায় মানববন্ধনে যেতে হবে বলে ডেকে আনেন। তবে কি কারণে এ বিক্ষোভ-মানববন্ধন তার কিছুই সে জানেনা। একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সৈয়দ আল-আমীন বলেন, অধ্যক্ষ স্যারের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ প্রচারের প্রতিবাদ জানানোর জন্য মানববন্ধন হবে। ওই মানববন্ধনে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাই তারা ক্লাশ বন্ধ রেখে মানববন্ধন করতে রাস্তায় নেমেছে। একই বক্তব্য জেসমিন, মরিয়ম আক্তার বিথি, সুব্রত, মারিয়া আক্তার মুন্নি, টুম্পাসহ অনেকের। মুরাদিয়ার বাসিন্দা বিক্ষুব্ধ ছাত্র অভিভাবক মো. সুলতান মুন্সী, রাহাত চাকলাদার, ফিরোজ সিকদার, ফোরকান , আবদুল কুদ্দুস (কালু) মোল্লাসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, অসৎ দূর্ণীতিবাজ অধ্যক্ষের অপকর্ম ঢাকতে ক্লাশ বন্ধ রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়ে কলেজের ভাবমূর্তি নস্ট করা হচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থে অধ্যক্ষ ও তার দোষররা শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করায় তারা প্রতিবাদ করেছে। শতাধিক অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর তোপের মুখে মানববন্ধন ভন্ডুল হয়ে যায়। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ থানায় খবর দেয়। পুলিশ এসে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশে পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ আহসানুল হক বলেন, সম্প্রতি আমাকে হেয়প্রতিপন্ন ও সন্মানহানী করতে মিথ্যে রটনা ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ভিত্তিহীন খবর প্রকাশের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা স্ব-উদ্যোগেই মানববন্ধনে নেমেছে। তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনি। তিনি আরও বলেন, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আইনী ভাবে তাদের মোকাবেলা করা হবে।
দুমকি থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুস সালাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। তবে কোন পক্ষ এখনও কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিসেস বদরুন্নাহার ইয়াসমিন বলেন, ক্লাশ সময়ে অধ্যক্ষ তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামিয়ে মানববন্ধন করাতে পারেন না। মুরাদিয়া আজিজ আহম্মেদ কলেজে এটি হয়ে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল-ইমরান বলেন, কোন ক্রমেই ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ বা সমাবেশে বাধ্য করতে পারেন না। খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে, অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।