![ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কয়রা নদীর ১৩-১৪/২ নম্বর বাঁধ জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে গেলে প্লাবিত হয় মঠবাড়ি এলাকা। মানুষ ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রে। বুধবার খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি এলাকায়](https://nirvulbarta.com/wp-content/uploads/2021/05/image-3.gif)
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কয়রা নদীর ১৩-১৪/২ নম্বর বাঁধ জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে গেলে প্লাবিত হয় মঠবাড়ি এলাকা। মানুষ ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রে। বুধবার খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি এলাকায়ছবি: সাদ্দাম হোসেন
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট উচ্চ জোয়ারে খুলনার তিনটি উপজেলার অন্তত ১৮টি স্থানে নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় অর্ধশত গ্রাম। আজ বুধবার দুপুরে ওই সব স্থান ভাঙনের কবলে পড়ে। পুরো ক্ষতির পরিমাণ সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরূপণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন।
খুলনার উপকূলীয় উপজেলা ধরা হয় কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা—এ চারটি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়রা উপজেলা। ওই উপজেলার চারটি ইউনিয়নে অন্তত ১০টি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। আর বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে, এমন স্থানের সংখ্যা আরও অন্তত ১৫।
![ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কয়রা নদীর ১৩-১৪/২ নম্বর বাঁধ জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে গেলে প্লাবিত হয় মঠবাড়ি এলাকা](https://nirvulbarta.com/wp-content/uploads/2021/05/image-4.gif)
কয়রা উপজেলাটির চারপাশ নদী দিয়ে বেষ্টিত। উপজেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে ১৫৫ কিলোমিটারের মতো। এর আগে আইলা, সিডর, বুলবুল ও আম্পানে উপজেলার ব্যাপক ক্ষতি হয়। আইলার পর কিছু কিছু এলাকা ৫ বছরের মতো সাগরের লোনা পানিতে তলিয়ে ছিল। গত বছরের ২০ মে আঘাত হানা আম্পানে কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধের মারাত্মক ক্ষতি হয়। বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় প্রায় অর্ধশত গ্রাম। জেলার ৯টি উপজেলায় সাড়ে ৮৩ হাজারের মতো ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে শুধু কয়রা উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ছিল ৫১ হাজার। ওই উপজেলায় সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রায় দুই লাখ মানুষ।বিজ্ঞাপন
![মানুষ ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রে। বুধবার খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি এলাকায়](https://nirvulbarta.com/wp-content/uploads/2021/05/image-8.gif)
প্রায় আট মাস পর সাগরের লোনা পানিমুক্ত হয় কয়রা উপজেলা। আম্পানের ক্ষত এখনো শুকায়নি। এরই মধ্যে আবার নতুন করে সংকটে পড়ল কয়রার মানুষ। যদিও বিকেলের দিকে ভাটায় পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধ সংস্কারের কাজে নেমে পড়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।
![মানুষ ছুটছে আশ্রয়কেন্দ্রে। বুধবার খুলনার কয়রা উপজেলার মঠবাড়ি এলাকায়](https://nirvulbarta.com/wp-content/uploads/2021/05/image-7.gif)
ঝড়ের কোনো প্রভাব ছিল না কয়রায়। গতকাল মঙ্গলবার রাতের জোয়ারের পানি প্রবেশ ঠেকিয়ে দেন এলাকাবাসী। তবে আজ বুধবার দুপুরের জোয়ারে আর শেষ রক্ষা হয়নি। পানি যত বেড়েছে, কোদাল আর প্লাস্টিকের বস্তা নিয়ে মানুষ তত পানি আটকানোর চেষ্টা করেছেন। তারপরও বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় ৪ কিলোমিটারের মতো বাঁধ ভেঙে গেছে। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের শাকবাড়িয়া নদীর আংটিহারা, বীণাপানি এলাকা, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের একই নদীর গাতিরঘেরি, পদ্মপুকুর এলাকা, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কয়রা নদীর তেঁতুলতলা, চৌকনি, শিংয়ের চর এলাকা, মহারাজপুর ইউনিয়নের কয়রা নদীর পবনা ও মঠবাড়ি এলাকা এবং কপোতাক্ষ নদের দশালিয়া এলাকার বাঁধ ভেঙে গেছে।
কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সাগর হোসেন বলেন, জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গিয়ে ৫ হাজার ৮৫০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত বাড়ির সংখ্যা ১ হাজার ২০০। আর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০টির মতো ঘর। আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ হাজার ২০০ মানুষ রয়েছেন।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, যে উচ্চতায় জোয়ার হয়েছে, তাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কিছু করার ছিল না। তারপরও সবার চেষ্টায় কাজ করে ভয়াবহতা ঠেকানো গেছে। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় মানুষের সহায়তায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। রাতের জোয়ারে যদি বড় কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে এ যাত্রায় কয়রায় খুব বেশি ক্ষতি না–ও হতে পারে।
![ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে কপোতাক্ষ নদে জোয়ারের পানি বাঁধ উপচে পড়লে বালুর বস্তা দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করছে এলাকার মানুষ। বুধবার খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর মদিনাবাদে](https://nirvulbarta.com/wp-content/uploads/2021/05/image-5.gif)
পাইকগাছা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে অন্তত ৭টি স্থানের বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে ১ হাজার ২০০টির মতো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে এলাকাবাসী কাজ করছেন বলে জানান ওই উপজেলার পিআইও ইমরুল কায়েস। তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এলাকার ২৫০ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
দাকোপ উপজেলায় তীলডাঙ্গা ইউনিয়নের সোনার বাংলা কলেজের পাশের স্লুইসগেট এলাকার বাঁধ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া ৮ থেকে ১০টি স্থান বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলেও তাতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানান পিআইও শেখ আবদুল কাদের। তিনি বলেন, বাঁধ ভেঙে যে ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করা যায়নি। বটিয়াঘাটা উপজেলায় কয়েকটি স্থানে বাঁধ উপচে পড়লেও তাতে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি বলে জানান ইউএনও মো. নজরুল ইসলাম।
![কয়রা নদীর বাঁধ জোয়ারের পানির চাপে ভেঙে গেলে প্লাবিত হয় মঠবাড়ি এলাকা। অনেক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে মঠবাড়ি শান্তিময়ী প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে। বুধবার দুপুরে](https://nirvulbarta.com/wp-content/uploads/2021/05/image-6.gif)
খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যেতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জরুরি খাদ্যসহায়তা, শিশুখাদ্য ও গোখাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। পাউবো বাঁধ মেরামতের কাজ করছে। রাতের জোয়ারে বড় কোনো বিপর্যয় না হলে হয়তো আর কোনো সমস্যা হবে না।