তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুহাম্মদ রিজিবুল ইসলামের দাবি, সব প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। কাজ যাচাই–বাছাই করার পর বিল দেওয়া হয়েছে।
পিআইওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আটটি ইউনিয়নে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) প্রকল্পের নামে চারটি পর্যায়ে সাধারণ ও বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। চার ধাপে ২৪৪টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ২০৭ টাকা। তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ের বরাদ্দ আসে জুনের তৃতীয় সপ্তাহে। সব কাজ শেষের সময়সীমা ছিল ৩০ জুন।
নওয়াপাড়া পৌরভার আমডাঙ্গা গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২২টি ঘরে গত ফেব্রুয়ারি থেকে বসবাস করছেন ভূমিহীনরা। প্রেমবাগ ইউনিয়নে অবস্থান দেখিয়ে ঘরগুলোর ‘ভিত্তি ভরাট ও প্যালাসাইডিংয়ের’ জন্য চারটি প্রকল্পে ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে টিআর ও কাবিটার ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭৯০ টাকার দুটি প্রকল্পের সভাপতি যথাক্রমে প্রেমবাগ ইউপির সদস্য আসাদুজ্জামান ও আনোয়ার হোসেন। তৃতীয় পর্যায়ের কাবিটার অবশিষ্ট ১৪ লাখ টাকার দুটি প্রকল্পের সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিনারা খানম।
মুঠোফোন নম্বরে বারবার কল করা হলেও মিনারা পারভীন ধরেননি। কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সুন্দলী ইউনিয়নে ৩৮টি প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। সুন্দলী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে মাটি ভরাট বাবদ ১২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৬৭ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে কিছু কাজ করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের সভাপতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম ধর বলেন, ওটা মাঠ ভরাট নয় পুকুর ভরাট। কাজ ঠিকমতো করা হয়েছে।
সুন্দলী এস টি স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিনটি প্রকল্পে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মাঠে মাটি ভরাট বাবদ দেওয়া হয় ৬ লাখ টাকা। দুটি প্রকল্পের সভাপতি স্বপন সরকারের ভাষ্য, বৃষ্টির মধ্যে দূর থেকে মাটি এনে মাঠ ভরাট করা হয়েছে। খুব ভালো করে কাজটা করা হয়েছে। পুরো টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, মাঠে অল্প কিছু মাটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন মাঠে এক বিঘতের বেশি পানি জমে আছে।
রোজিনা খাতুন বলেন, ‘সব প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করেছি। অফিস কাজ দেখে তবেই বিল ছেড়েছে।’
সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের রামনগর (শান্তিপুর) বাজারসংলগ্ন নদীভাঙন প্যালাসাইডিংসহ রাস্তা মেরামতে বরাদ্দ ছিল ১০ লাখ ২৩ হাজার ৫০ টাকা। শান্তিপুর পাড়ার স্বপন দাস বলেন, ‘মাত্র দুই ট্রলার ভরে বালু এনে প্রায় তিন হাজার প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রাস্তায় ফেলা হয়েছিল। পাশে বাঁশ দিয়ে বেড়া তৈরি করা হয়েছিল। নদীর জোয়ারের জলে বেশিরভাগ বস্তা ভেসে গেছে।’
প্রকল্প সভাপতি শুভংকর অধীকারী বলেন, ‘বাঁশ দিয়ে বেড়া তৈরি করে তার মধ্যে বালু ভরতি বস্তা ফেলে বেড়িবাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু জোয়ারের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। তা ছাড়া পাশের লোকজন বালু চুরি করে নিয়ে গেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সব প্রকল্পে কাজ হয়েছে। যেসব প্রকল্পে কাজ কম করা হয়েছিল, পরে সেসব প্রকল্পে কাজ করিয়ে নেওয়া হয়েছে।