বৈঠকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর জানায়, শুধু এ তিন কারখানা নয়, ভারতের কয়েকটি রাজ্য হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা আসছে। এ কাজে ভারতীয় সমুদ্রপথকেও ব্যবহার করছে মাদক পাচারকারীরা। এ বৈঠকে ভারত থেকে নানান নামে ফেনসিডিল এবং হেরোইন, গাঁজা ও ব্যুপ্রিনরফিন ইনজেকশনের মতো মাদক আসছে বলেও তথ্য তুলে ধরে বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, বৈঠকে ভারতের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পক্ষ থেকে মাদক পাচার বন্ধে একসঙ্গে কাজ করা, সক্ষমতা বাড়ানো, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান এবং আন্তদেশীয় মাদক পাচারকারীদের সম্পর্কে একে অপরকে জানানোর ওপর জোর দেওয়া হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবদুস সবুর মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের কিছু অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হয়। সেটি ভারতকে অবহিত করা হয়েছে। ভারতের সঙ্গে মাদক পাচারের নতুন নতুন রুট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিন কারখানা
বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ভারতে যে তিনটি ইয়াবা কারখানার কথা বলেছে, তার দুটি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও একটি উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার কাঁচামাল ‘এমফিটামিন’ এনে এসব কারখানায় ইয়াবা তৈরি হয়।
বৈঠকে উপস্থাপিত নথি অনুযায়ী, কোচবিহারের একটি কারখানা বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে। কারখানাটির মালিক স্থানীয় আবদুল সামাদের ছেলে মো. আল আমিন ইসলাম (৩৫)। আরেকটি কারখানা একই সীমান্তের ৪০০ মিটারের মধ্যে। এই কারখানার মালিক স্থানীয় হজরত আলীর ছেলে নজরুল ইসলাম (৩৫)। তৃতীয় কারখানাটি সাতক্ষীরা সীমান্তের ওপারে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনায়। কারখানাটি সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। মালিক ডিম্পল নামে এক ব্যক্তি।
বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলছেন, বৈঠকে তিনটির সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরা হলেও ইয়াবা কারখানার সংখ্যা আরও বেশি। গোয়েন্দা তথ্য হলো, পশ্চিমবঙ্গের বাইরে আসাম ও মেঘালয়ে ইয়াবার কারখানা রয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের সীমান্তে ইয়াবার ১১টি কারখানার বিষয়ে তাঁরা গোয়েন্দা তথ্য পেয়েছেন। তথ্য যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।
বিজিবির পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভারতীয় সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ইয়াবার কারখানা স্থাপনের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়া গেছে। তবে মাদক ঠেকাতে বিজিবি কার্যক্রম জোরদার করেছে।
উৎস মিয়ানমার, আসে ‘ভারত থেকে’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দুজন কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারের ক্ষেত্রে ভারতকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। প্রথমে মিয়ানমার থেকে মিজোরাম সীমান্ত হয়ে ভারতে নেওয়া হয় ইয়াবা। পরে তা ত্রিপুরা, মেঘালয় ও আসাম হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। এ কাজ চলছে তিন বছর ধরে।
মাদকবিষয়ক গবেষক ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, আশির দশকের শুরু থেকে ভারতীয় সীমান্তে কারখানায় ফেনসিডিল উৎপাদন করে বাংলাদেশে পাঠানো শুরু করেন মাদক কারবারিরা। ফলে দেশ ফেনসিডিলে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। এখনো এটা চলছে। তিনি বলেন, এখন ইয়াবাও যদি ভারতে তৈরি হয়, সেটা হবে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক বিষয়।