
গতকাল বিকেলে মাহমুদনগর এলাকায় কথা হয় খোকনের সঙ্গে। ‘নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশা কী—এমন প্রশ্নের উত্তরে লাজুক হাসি খোকনের। তারপর পাল্টা প্রশ্ন করেন। ‘কইলে কি প্রত্যাশা পূরণ করবেন? আমি চাই বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমুক। মেয়র সাব কি জিনিসপত্রের দাম কমাইতে পারব? ওনারা পারব না, এইডা সরকারের কাম। সরকার নির্বাচনে (সংসদ নির্বাচন) তো ভোটই দিতে পারি নাই। যাইয়া দেখি ১১টার আগেই কেন্দ্রে ব্যালট নাই। এহন একটাই চাওয়া। সিটিতে ভালো ভোট হোক, একদম একের ভোট।’
সিটি করপোরেশনের ১০ বছরের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম গৃহস্থালি বর্জ্য আর মশার উৎপাত।
খোকনের কথা শুনে অটোরিকশাচালক ইয়াদ আলী, জহিরুল মিয়া আর পাশের চা–দোকানি ফয়জুন নেসা এগিয়ে আসেন। নির্বাচন নিয়ে তাঁদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা জানান। নানাজনের কথার ফাঁকে খোকন বলেন, ‘শীতলক্ষ্যার পানি নষ্ট। এই পানি মেডিসিন দিয়া আমাগো সাপ্লাই দেয়। গোসল করলে চুল ওঠে, মুখে নিলে গন্ধ আইয়ে। পরিষ্কার পানি লাগব। বাড়ি বাড়ি যেন পরিষ্কার পানি যায়।’ খোকনের কথায় সায় দেন ফয়জুন নেসারা। আর ইয়াদ আলী চান রাতবিরাতে নিরাপদে চলাচল করতে। ইয়াদ আলী বলেন, জন্ম থেকেই বন্দরের ফরাজিকান্দা এলাকায় বসবাস তাঁর। পাঁচ বছর আগেও এলাকায় ছিনতাইয়ের কথা শোনেননি। কিন্তু সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে ছিনতাই বেড়েছে। এবারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেবেন বলে আশাবাদী তিনি।
তবে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের মদনগঞ্জ এলাকার গৃহিণী শিল্পী বেগম মনে করেন, সিটি করপোরেশনের ১০ বছরের সবচেয়ে বড় সমস্যার নাম গৃহস্থালি বর্জ্য আর মশার উৎপাত। এই গৃহিণীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশন–নির্ধারিত বিলের চেয়ে বেশি বিল নেওয়া হলেও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিত বর্জ্য সংগ্রহ করতে আসেন না। লোকজন বাধ্য হয়ে এলাকার যেখানে–সেখানে গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলে আসেন। বর্জ্য সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি মশার উৎপাত বন্ধে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোট দিতে যাবেন কি না—এমন প্রশ্নে শিল্পী বেগমের স্পষ্ট উত্তর, ‘ভোট তো দিমুই। সিটি নির্বাচনে ঝামেলা হইব না। আইভী-তৈমুর ঝামেলার লোক না। তবে শুনতাছি ইভিএম মেশিনে ভোট দেওয়া ঝামেলার।’
১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এবার মোট ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন।

কেবল শিল্পী বেগমই নন; গতকাল দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তত নয়জন ভোটার নির্বাচন বিষয়ে কথা বলার সময় ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে তাঁদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে না জানা থাকায় তাঁরা ভোটের পদ্ধতি নিয়ে শঙ্কায় আছেন। ভোটের আগে এই পদ্ধতি সম্পর্কে না জানানো হলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ঝামেলা পোহাতে হবে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন অসংখ্য প্রত্যাশার কথা জানালেও ভোটারদের প্রত্যেকেই বলেছেন, পুরোনো কদম রসুল পৌরসভা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে রূপান্তরের পর অবিশ্বাস্য পরিবর্তন এসেছে তাঁদের জীবনে। যাতায়াতব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে, পর্যাপ্ত সড়কবাতির ফলে দিন–রাতের পার্থক্য কমেছে। তাঁরা বলছেন, অন্ধকারাচ্ছন্ন অবহেলিত একটি পৌরসভা সিটি করপোরেশনের ১০ বছরে আলো–ঝলমলে একটি শহরে পরিণত হয়েছে। আগামীর জনপ্রতিনিধিদের কাজ হবে শহরকে বাসযোগ্য রাখা।
১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এবার মোট ভোটার ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন।