

বিআরটিএ ও পরিবহন খাতের সূত্রগুলো বলছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কিছু বাস্তব সমস্যা দেখা দিয়েছে। যেমন এ দফায় কোনো অফিস-আদালত ও কলকারখানা বন্ধ না করেই গণপরিবহন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে। এর কারণর রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরে আসলে যাত্রী আগের মতোই থাকবে। কিন্তু গণপরিবহনে ধারণক্ষমতা অর্ধেক কমে যাবে। বর্তমানে অফিস শুরু এবং ছুটির সময় বাসগুলোয় ঠাসাঠাসি করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। তাহলে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে এবং দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন না করলে বাকি যাত্রী কোথায় যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর নেই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর।

আগের দুই দফায় অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নিয়মের পাশাপাশি বাসে ভাড়াও ৬০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছিল সরকার। কিন্তু পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা এর চেয়েও বাড়িয়ে আদায় করেন। ঢাকার ফার্মগেট-নিউমার্কেট, ফার্মগেট-মোহাম্মদপুর কিংবা ফার্মগেট-ধানমন্ডি; মতিঝিল-খিলগাঁওসহ বিভিন্ন পথে লেগুনা-টেম্পোতে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়। ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয় এসব ছোট যানেও। পাশাপাশি বেড়ে যায় রিকশাভাড়াও।
আর বাসের ভাড়া বৃদ্ধি পেলে ঢাকার আশপাশের যেসব জেলায় কমিউটার ট্রেন চলাচল করে, সেগুলোয় চাপ পড়ে যাবে। তখন অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ট্রেন চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। রেলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, মতিঝিল থেকে নারায়ণগঞ্জে বাসের ভাড়া কমবেশি ৫০ টাকা। ৫০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি পেলে এ পথের ভাড়া হয়ে যাবে ৭৫ টাকা। অন্যদিকে, কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে ট্রেনের ভাড়া ২০ টাকা। এ কারণে বাসের অনেক যাত্রী ট্রেনে যেতে ভিড় করবে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে দিনে ৩০টির বেশি ট্রেন চলাচল করে। এরপরও অফিস শুরু ও ছুটির সময় গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করেন। বাসভাড়া বৃদ্ধির ঘোষণা এলে যাত্রীর চাপ আরও বেড়ে যাবে। তখন রেল কর্তৃপক্ষকে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে। নতুবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক নিশ্চিত করার বিষয়গুলো কথার কথায় পরিণত হবে।
একইভাবে মতিঝিল থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত বাস-মিনিবাসের ভাড়া ৯০ টাকা। ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে ভাড়া গিয়ে ঠেকবে ১৩৫ টাকা। এই পথে চলাচলকারী কমিউটার ট্রেনের ভাড়া ২০ টাকা। রেলের একজন কর্মকর্তা বলেন, কমলপুর স্টেশন থেকে টিকিট দেখে দেখে যাত্রী প্রবেশ করানোর সুযোগ আছে। কিন্তু তেজগাঁও বা পথের অন্য কোনো স্টেশন থেকে বেশি যাত্রী উঠে গেলে কে ঠেকাবে? এ ছাড়া জয়দেবপুর থেকে যাত্রী বোঝাই করে উঠলে রেলের লোকজন ঠেকাতে পারবে?
ঢাকাসহ বড় শহরে রাইড শেয়ারিং সেবা চালু আছে। রাইড শেয়ারিং সেবায় কত যানবাহন ও মোটরসাইকেল নিয়োজিত আছে, এর প্রকৃত হিসাব বিআরটিএর কাছে নেই। সংস্থাটি শুধু রাইড শেয়ারিংয়ের লাইসেন্সপ্রাপ্ত যানের হিসাব রাখে। এ সংখ্যা ২৬ হাজারের মতো। এর ৮০ শতাংশ মোটরসাইকেল। তবে প্রকৃতপক্ষে গাড়ি ও মোটরসাইকেল এর কয়েক গুণ বেশি চলে।
করোনা মহামারির পর থেকে দূরপাল্লার পথে মানুষের যাতায়াত কিছুটা কমেছে। তবে মাস ছয়েক ধরে পর্যটন এলাকাগুলোর পথে মানুষের ঢল নেমেছে। ফলে এসব পথের দূরপাল্লার বাস আসন পূর্ণ করেই চলাচল করেছে। সরকার পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ করেনি। এ কারণে যাত্রীর চাপ খুব বেশি কমার কথা নয়। তাহলে এসব পথে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার নিয়ম কতটা মানা হবে—এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ ছাড়া নভেম্বরে এমনিতেই ভাড়া অনেক বেড়ে গেছে। আরও বাড়লে মানুষ কি তা বহন করতে পারবে? পর্যটনকেন্দ্র ছাড়া অন্য জেলা শহরে হয়তো অর্ধেক যাত্রীর নিয়ম কিছুটা মানা যাবে। কিন্তু বড় সমস্যা হবে ঢাকার মতো বড় শহরে।